অনলাইন ডেস্ক : রাতারাতি ভাগ্য বদল করে ধনী হয়েছেন ভারতের এক ঋণগ্রস্ত শ্রমিক। মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় ইজারা নেওয়া একটা খনি থেকে একটা বড় আকারের হীরা খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এই ব্যক্তির নাম রাজু গোন্ড।
যে হীরা খুঁজে পেয়েছেন তিনি সেটি সরকারি নিলামে তোলা হবে। জানা গিয়েছে আনুমানিক ৮০ লক্ষ টাকায় নিলাম হতে পারে ১৯.২২ ক্যারেটের এই হীরা।
রাজু গোন্ড নামে এই যুবক জানিয়েছেন, পান্নার খনিতে বহু বছর ধরেই হীরা খোঁজার কাজ করছেন তিনি। গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানকার হীরার খনি লিজ বা ইজারায় নিচ্ছেন। এমন মূল্যবান হীরা খুঁজে পাওয়ার অভিজ্ঞতা কিন্তু তার আগে হয়নি।
হীরার জন্য বিখ্যাত ভারতের মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলা। এখানে অনেকেই ভারত সরকারের কাছ থেকে খনি লিজ নিয়ে হীরা খোঁজার চেষ্টা চালান। কেউ এদের মতো মূল্যবান হীরা খুঁজে পান, কারও ভাগ্যে জোটে ছোটখাটো আকারের হীরা আর কেউ বা সফল হতে পারেন না।
‘ন্যাশনাল মিনারল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন’ বা জাতীয় খনিজ উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে পান্নায় ‘মেকানাইসড ডায়মন্ড মাইনিং’ বা যন্ত্র চালিত হীরা খনি প্রকল্প পরিচালনা করে কেন্দ্র সরকার।
ব্যক্তি, পরিবার এবং সমবায় গোষ্ঠীকে হীরা খনি ইজারা দিয়ে থাকে ‘ন্যাশনাল মিনারল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন’। অগভীর এই খনিতে অনেকেই আসেন হীরে খুঁজতে। যারা এই খনি লিজে নেন, তারা মূলত ছোট-খাটো যন্ত্রপাতির সাহায্যে হীরা খোঁজার চেষ্টা করেন।
খননের পর তারা যা খুঁজে পান, সেটা সরকারি ডায়মন্ড অফিসে জমা দিয়ে দিতে হয়। এই অফিস খুঁজে পাওয়া হীরার মূল্য নির্ধারণ করে থাকে।
লিজে নেওয়া খনি
হীরার খনির লিজে নেওয়ার বিষয়ে বিশদে জানতে মধ্যপ্রদেশের এক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছিল বিবিসি। অনুপম সিং নামে ওই ওই কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, “এই খনিগুলো ২০০-২৫০ টাকায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লিজ দেওয়া হয়ে থাকে।”
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বুন্দেলখণ্ডের এক শ্রমিক এই পান্না জেলার খনি থেকেই দেড় কোটি টাকা মূল্যের একটা হীরা খুঁজে পেয়েছিলেন। তবে এত দামি হীরা খুঁজে পাওয়ার ঘটনা সচরাচর ঘটে না।
অনুপম সিং জানিয়েছেন খনিতে অনেকেই প্রতিদিন ছোট খাটো হীরা পেয়ে থাকেন। তবে রাজু গোন্ড নামে ওই শ্রমিক যে হীরা পেয়েছেন, সেটা তার আকারের কারণে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
মি. গোন্ড বিবিসিকে জানিয়েছেন, বর্ষাকালে তেমন কৃষিকাজ কাজ থাকে না। সেই সময় রাজমিস্ত্রির কাজও পান না। তাই উপার্জনের কথা ভেবে অন্য পথ বাছতে হয়। বর্ষার সময় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা খনি লিজ নিয়ে হীরা খোঁজার কাজ করে থাকেন।
দুই মাস আগে পান্নার কাছেই কৃষ্ণ কল্যাণপুর পট্টি গ্রামে একটা খনি লিজ নিয়েছিলেন। রাজু গোন্ড বলেন, “আমরা গরীব মানুষ। আমাদের কাছে আয়ের উৎস বলতে অন্য কিছু নেই। তাই কিছু উপার্জনের আশায় আমরা এটা (খনিতে হীরা খোঁজার কাজ) করে থাকি।”
হীরার খনি কীভাবে ভাগ্য বদল করতে পারে সে কথা শুনে এসেছেন রাজু গোন্ড। অন্যদের কাছ থেকে গল্প শুনেছেন কীভাবে কারো কারও ভাগ্য বদলে গিয়েছে এই খনি থেকে হীরা খুঁজে পাওয়ার পর। কোনও একদিন একটা মূল্যবান হীরা খুঁজে পেয়ে তারও ভাগ্য বদল হবে এমন স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন।
কীভাবে হীরা খুঁজে পেলেন?
চলতি সপ্তাহের বুধবার সকালেও হীরার খনিতে কাজে গিয়েছিলেন রাজু গোন্ড, যেমনটা ঠিক অন্যান্য দিনগুলোতেও করে থাকেন। তবে এইদিনই যে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে চলেছে সে বিষয়ে কল্পনাও করেননি তিনি। হীরা খোঁজার এই কাজটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়।
মধ্যপ্রদেশের এই যুবক বলেছেন, “এই কাজটা কিন্তু বেশ পরিশ্রমের কাজ। আমরা গর্ত খুঁড়ি, মাটি ও পাথর বের করি। সেগুলোকে চালনিতে রেখে ধুয়ে নিই। তারপর খুব সাবধানে ছোট ছোট পাথরের মধ্য থেকে হীরা খোঁজার চেষ্টা করতে থাকি।” বুধবার বিকেলে তার কঠোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন রাজু গোন্ড।
সেইদিনের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “সেদিন আমি সব পাথরগুলো ধুচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় একটা কাচের টুকরোর মতো কিছু একটা আমার চোখে পড়ে।” “সেটা তুলে আমি আমার চোখের সামনে ধরলাম। একটা আলতো আলোর মতো কিছু দেখতে পেলাম। পরে বুঝতে পারলাম আমি হীরা খুঁজে পেয়েছি।”
ঋণ জর্জরিত
বুধবার বিকেলে ওই হীরা খুঁজে পাওয়ার পর সেটা নিয়ে সরকারি অফিসে যান রাজু গোন্ড। সেখানে হীরার ওজন মেপে মূল্য স্থির করা হয়। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা অনুপম সিং জানিয়েছেন, আগামী সরকারি নিলামে ওই হীরা তোলা হবে।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, সরকারি রয়্যালটি ও হীরার উপর বসানো কর কেটে নেওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়া হবে রাজু গোন্ডকে। আনুমানিক ৮০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হতে পারে এই হীরা। এই অর্থ দিয়ে কী করতে চান তিনি তা জিজ্ঞাসা করা হলে মধ্যপ্রদেশের এই বাসিন্দা জানিয়েছেন, হীরা বিক্রি করে পাওয়া টাকা দিয়ে মাথা গোঁজার জন্য একটা পোক্ত ব্যবস্থা করতে চান তিনি।
তার ইচ্ছে, পরিবারের জন্য একটা ভালো বাড়ি বানানোর। একইসঙ্গে তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে চান। প্রাপ্ত টাকা থেকে একটা অংশ তাদের জন্য ব্যয় করবেন তিনি। তার সন্তানরা ভালোভাবে লেখাপড়া করুক এটা তার স্বপ্ন। তবে ঋণ হিসাবে যে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন তিনি, সেই টাকা সবার আগে ফেরত চান রাজু গোন্ড।
তার রাতারাতি ধনী হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসা নিয়ে তেমন ভাবিত নন গোন্ড। বরং অ্যাকাউন্টে যে একটা মোটা অঙ্কের টাকা আসতে চলেছে, সেটা নিয়েই ‘সন্তুষ্ট’ এই ঋণগ্রস্ত যুবক।
তিনি জানিয়েছেন, হীরা নিলাম করার পর পাওয়া অর্থ থেকে কিছু অংশ তিনি অন্যানদেরও দিতে চান। যে ১৯ জন আত্মীয় তার সঙ্গে থাকেন, তাদেরকেও প্রাপ্ত টাকা থেকে ভাগ দেবেন।
কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়ার পর আবারও হীরা খোঁজার উদ্দেশ্যে খনিতে যাবেন কি রাজু গোন্ড? এর উত্তরে তিনি বলেছেন, “কাল আবার আমি ওই একই খনিতে কাজ করতে যাব আর তারপর হীরা খোঁজা শুরু করব।”
সূত্র-বিবিসি।