স্বাস্থ্য ডেস্ক : যুগ যুগ ধরে মানুষ মাথাব্যথায ভুগে আসছেন। এই মাথাব্যথা থেকে আমরা সবাই মুক্তি পেতে চাই। তরুণ-তরুণি থেকে বৃদ্ধি-বৃদ্ধা পর্যন্ত মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। মহিলারা পুরুষের চেয়ে ৪ গুন বেশি এই মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন।
এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে পরিবারে মাথাব্যথার রোগী নেই। মাথাব্যথা মেডিকেল কন্ডিশনের একটি অন্যতম অসুস্থতা। বৈশ্বিক জনগোষ্টীর প্রায ১৮ ভাগ লোক মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। মাথাব্যথা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে যেমন – টেনশন হেডেক, ইনফ্লাম্যাশন হেডেক, ট্রাকশন হেডেক, ভাসকুলার হেডেক (মাইগ্রেন, ক্লাস্টার, টক্রিক) ও সার্ভিকোজেনিক হেডেক অন্যতম। এর মধ্যে ১৫-২০% সার্ভিকোজেনিক হেডেক বা সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথায় ভুগেন।
সার্ভিকোজেনিক হেডেক এমনি একটি মাথাব্যথা যার উৎপত্তি ঘাড় থেকে। মাথার এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, এম আর আই- এ সাধারণত কোনো অসুবিধা পাওয়া যায় না। কারণ কষ্ট থাকে ঘাড়ের উপরিভাগে। ঘাড়ের অন্যান্য স্ট্রাকচার যেমন- আপার সার্ভাইক্যাল ফ্যাসেপট জয়েন্ট, আপার সার্ভাইক্যাল মাসেল, সি২-৩ ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক, কেরোটিড আর্টারি, ডুরামেটার আপার স্পাইণাল কর্ড, ঘাড়ের পিছনে ক্রেনিয়াল ফোছা এ ধরনের মাথাব্যথা তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট। এছাড়াও উইফ্লাস ইনজুরি, ঘাড়ের উপর অতিরিক্ত স্ট্রেস, অসঠিক ভঙ্গিতে পড়াশুনা, কম্পিউটর ব্যবহার, মোবাইল ফোন ব্যবহার, অফিসওয়ার্ক ও সামনের দিকে ঘাড় বাঁকা করে দীর্ঘ সময় কাজ করা থেকেও সার্ভিকোজেনিক হেডেক হতে পারে।
সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথা রোগীর, ঘাড়ের ফিজিক্যাল এক্রামিনেশন করলে তার আপার ক্রস সিনড্রম পাওয়া যায়। এছাড়াও রোগরি ফরওয়ার্ড হেড পোশ্চার থাকে ও রোগীর জয়েন্ট মবিলিটি কমে যায়। ঘাড়ের ও কাঁধের বিভিন্ন মাংসপেশী শক্ত বা টাইট হয়ে যায়। মাথাব্যথার সাথে অনেকের চোখ, কপাল , কনের পাশে ও থুতনিতে ব্যথা হয়ে থাকে।
ঘাড় পরীক্ষা করলে দেখা যায় নেকের উপরিভাগের ডান পাশে ব্যথা এবং টেন্ডার। পাশ থেকে দেখা যায় এবং আমাদের মেজারমেন্ট টুলস দ্বারা পরীক্ষা করে দেখা যায়, এন্টিরিওর হেড পোশ্চার আছে। অক্রিপিটো- নিউকিয়াল রিজিওনেলোকালাইজ পেইন আছে। মাথা ডান-বামে ঘোরাতে এবং পিছনে দিকে বাঁকা করতে কষ্ট হয় অর্থাৎ মুভমেন্ট কমে যায়। এই সমস্ত উপসর্গ দিক-নির্দেশনা সার্ভিকোজেনিক হেডেক-এ ভুগছেন।
মনে রাখবেন, সার্ভিকোজেনিক হেডেক-এর ক্ষেত্রে মাথার এক্র-রে সিটিস্ক্যান ও এম আর আই-তে কোন অসুবিধা থাকবে না।
মাথাব্যথার অত্যাধুনিক চিকিৎসা করতে হবে। যেমন- সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কোনো জুরি নেই, সঠিক ফিজিওথেরাপি টিকিৎসা নিলে খুব সহজে এই সমস্যা থেকে আল্লাহ পাক মুক্তি করবেন ইনশা-আল্লাহ। আমরা ৪২ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেকছি, আমার কাছে যারা এ ধরনের মাথাব্যথার কষ্ট নিয়ে আসে তাদের মধ্যে অনেকেই ৫-১০ বছর এমনকি ২০ বছর ধরে এই কষ্টে ভুগে থাকেন। তার কারণ ব্যথার উৎপত্তি ঘাড় থেকে সুতরাং চিকিৎসা ঘাড়ের যে স্ট্রাকচার মাথাব্যথা তৈরি করছে সে স্ট্রাকচারে করতে হবে। তবে আমার এই অত্যাধুনিক মাথাব্যথার চিকিৎসায়, দীর্ঘ ৪২ বছরের প্রাকটিসে দেখেছি অধিক সময়ের কিংবা ১০-২০ বছরের মাথাব্যথার অধিকাংশ রুগীই বলে থাকেন তারা ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে আলহামদুলিল্লিহ কষ্ট মুক্ত হয়েছেন।
পরামর্শ :
ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে, প্রকৃতপক্ষে গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘস্হায়ী ডিহাইড্রেশন টেনশন মাথাব্যথার একটি সাধারণ কারণ। তাই সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান এবং জলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করুন।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ এবং স্নায়ু সংক্রমণ সহ শরীরের অগণিত ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ম্যাগনেসিয়াম। গবেষকগণ বলেছেন যাদের মাথাব্যথা ঘন ঘন হয়, তাদের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাবার যেমন-বাদাম, কলা, পিনটা বাটার ইত্যাদি বেশী বেশী খাবার খান।
ঘুমের অভাব আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নানা ভাবে ক্ষতিকর হতে পারে, এমনকি কিছু মানুষের মাথাব্যথার কারণও হতে পারে। উদাহরণস্বরুপ,একটি গবেষণায় মাথাব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি এবংতীব্রতা তুলনা করা হয়েছে যারা প্রতি রারত ছয় ঘন্টার কম ঘুমায় এবং যারা বেশি ঘুমায় তাদের মধ্যে। এতে দেখা হেছে যে যাদের কম ঘুম হয়েছিলো তাদের ঘন ঘন এবং গুরুতর মাথাব্যথা ছিল। তাই মাথাব্যথা প্রতিরোধ করতে হলে সঠিক পরিমাণ বিশ্রাম গুরুত্বপুর্ণ।
লেখক: প্রফেসর ড. আলতাফ হোসেন সরকার, মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিজঅর্ডারস বিশেষজ্ঞ,
লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টর ৪৪/৮, পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা।
আরও পড়ুন:
দেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা, ৪ ধরনেই কার্যকর
সব ভাইরাল জ্বর ডেঙ্গু নয়! কীভাবে বুঝবেন পার্থক্য
এই গরমে সুস্থ থাকতে কী খাবেন, কী খাবেন না