সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে উচ্চ মাধ্যমিকের একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে স্মার্টফোনের মাধ্যমে একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুলে পরীক্ষার্থীদেরকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় সাধারণ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রটির নাম আলহাজ্ব ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ। এই কেন্দ্রের ভেনু্কেন্দ্র এম মনসুর আলী জাতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে এই কারবার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কেন্দ্রে এবার এইসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে এমন কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, ওই কলেজেরই একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাকিল রানা হোয়াটস অ্যাপে একটি গ্রুপ খোলেন। নাম দেন ‘মিশন এ প্লাস’। এই গ্রুপে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে যুক্ত করা হয়। এই রকম আরও বেশ কয়েকটি গ্রুপ খুলে তাতে পরীক্ষার দশ মিনিট পূর্বে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার প্রশ্ন দেয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে কোনরূপ বাধা ছাড়াই স্মার্টফোন নিয়ে প্রবেশ করে। আধা ঘন্টা পর ফোনে চলে আসে পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান। গ্রুপে যুক্ত হওয়া শিক্ষার্থীরা ফোন দেখে প্রশ্নের উত্তরগুলো খাতায় লেখে।
জানা গেছে এই কাজে যুক্ত আছেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবসহ কেন্দ্র কমিটি। তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততায় চলছে প্রশ্নফাঁস ও নকল বাণিজ্য। এলাকাটি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার দুর্গম এক জনপদ। উপজেলা শহর থেকে নৌকাযোগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগে। এই সুযোগে অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ কেন্দ্রে সচিবের দায়িত্বে রাখেন তারই আস্থাভাজন সরিষাবাড়ীর দৌলতপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল খালেককে। ইংরেজি এবং বাংলা পরীক্ষা এই কায়দায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন শাকিল রানাকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সবকিছু অস্বীকার বলে বলেন, আপনারা যে শাকিলের কথা বলছেন আমি সেই শাকিল নই। গ্রুপের অ্যাডমিনে থাকা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলে অভিযোগ শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন।
কেন্দ্র সচিব প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল খালেক বলেন,আমি এসব অস্বীকার করছি না। তবে এখন এগুলো নিয়ে কথা বলতে পারব না।’
আর আলহাজ্ব ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ জানান, আমি হলে চেক করে শিক্ষার্থী ঢোকাই। এরপরেও ম্যাজিস্ট্রেট এসে সবকিছু দেখে গেছেন তিনিই সব বলবেন।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহরাব হোসেন জানান, আমরা ঘটনা শুনে তদন্তের জন্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। উপজেলা কৃষি অফিসারকে প্রধান করে সাথে দেয়া হয়েছে ভেটেরিনারি সার্জন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে। তারা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে কাজিপুর সরকারি মনসুর আলী কলেজের একজন শিক্ষককে কেন্দ্র সচিব করে পাঠাচ্ছি। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্যে পুলিশ ফোর্স বাড়ানো হয়েছে। তল্লাশি করে শিক্ষার্থীদের হলে ঢোকানো হচ্ছে।’