নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকার আহমেদ কবির (৪৫) নামে এক প্রতারক ইসলামী ব্যাংকে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সাড়ে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ঢাকায় মামলা করেছেন এক ভূক্তভোগী।
সম্প্রতি, মো. জাকির হোসেন (৫৪) নামে ঢাকার এক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বাদী হয়ে প্রতারক এই প্রতারকের নামে ঢাকা জেলার বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে (২৫ নম্বর কোর্ট) সিআর মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতি করার অপরাধে দণ্ডবিধি ৪০৬/৪১৯/৪২৯/৪৬৮/৪৭১/৫০৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলার আসামি হলেন-চট্টগ্রাম বাশঁখালী উপজেলার পূর্বচাম্বল ছড়ারকুল গ্রামের আলী আহাম্মদের ছেলে আহমেদ কবির (৪৫) কে। বর্তমানে যিনি চট্টগ্রাম নগরীর বায়জিদ বোস্তামী থানাধীন পলিটেকনিক্যাল মোড়স্থ জালালাবাদ এলাকায় বসবাস করেন বলে জানান।
এ প্রসঙ্গে মামলার বাদি মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রতারক আহমেদ কবির নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে আমাকে একটি ভিজিটিং দিয়েছেন। যেখানে লিখা আছে ‘সংবাদ বাংলা টিভি (এসবিটিভি), দৈনিক অর্থনীতি, এশিয়ান নিউজ বিডি ২৪, চট্টগ্রাম খবর অনলাইন পত্রিকার ইডিটর তিনি। কার্ডে আরো লেখা রয়েছে কেডিএ আইটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। যা কেডিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। কার্ডের নিচে ঠিকানা রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার সানি টাওয়ারের দ্বিতীয় তলা।’
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জাকির হোসেন ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রাম পোর্টে গেলে আসামী কবিরের সাথে পরিচয় হওয়ার সুবাদে উভয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে আহমেদ কবির মামলার বাদি জাকের হোসেন কে জানান, তিনি একজন সাংবাদিক। বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিসে তার যাতায়াত ও ভালো সম্পর্ক আছে। চাকরী দেওয়া ও বদলি সংক্রান্ত যেকোন তদবির করার মতো আসামির যথেষ্ট শক্তি সামর্থ্য ও ক্ষমতা রয়েছে। এ জাতীয় কোন বিষয়াদি থাকলে তিনি করে দেবেন।
কবিরের কথায় সরল বিশ্বাসে মো. আরিফ রহমান নামে এক আত্মীয়ের চাকরীর ব্যবস্থা করতে বলেন কবিরকে। কবির পরে জাকির কে জানান, তিনি এস আলম গ্রুপের এস আলমের ভাগ্নে। তিনি ইসলামী ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। তবে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান। কবিরের প্রস্তাবে জাকির রাজি হন। পরে টাকা প্রদানের জন্য কবির নিজ নামীয় ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড এর ব্যাংক হিসাব নং-০০৮১৪৩০০৮৫৯৮১ প্রদান করেন। পরে ভূক্তভোগী জাকির হোসেন বিগত ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর ১ লক্ষ টাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ৫০ হাজার টাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২৫ হাজার টাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২৫ হাজার টাকা, ৩১ সেপ্টেম্বর ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ৮ অক্টোবর ১ লক্ষ টাকা এবং কবিরের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বিকাশে ১২ অক্টোবর ২০ হাজার টাকা, ১৪ অক্টোবর ১০ হাজার টাকা, ১৫ অক্টোবর ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা প্রদান করেন।
এজাহারে আরোও বলা হয়, এরপর বিগত ২০২৩ সালের ৩রা অক্টোবর তারিখ উল্লেখ করে একটি নিয়োগপত্র পাঠান। যে নিয়োগপত্রটি নিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর প্রধান কার্যালয়ে এইচআরডি (HRD) বিভাগে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান নিয়োগপত্রটি ভুয়া এবং জাল জালিয়াতি পূর্ণ।
জাকির হোসেন বিষয়টি তাৎক্ষণিক কবির কে জানালে সে বিষয়টি এক পর্যায়ে স্বীকার করে টাকা ফেরত দিবেন বলে আশ্বাস দেন। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলেও এখনো টাকা দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে বাদি মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘অভিযুক্ত কবির সাংবাদিক না হয়েও ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রুপ ধারণ করে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন আত্মসাতের উদ্দেশ্যে। কারণ সে জাল জালিয়াত করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণা করে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। এ জন্য আদালতের কাছে দ্বারস্থ হয়েছি।’
অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, প্রতারক আহমেদ কবির এর আগেও নানা প্রতারণায় বিতর্কিত ছিলেন। গত ২০২১ সালের ২৭ মার্চ রাত ১০টার সময় মিথ্যা পরিচয়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে আটক হন সেনা সদস্যদের হাতে। এ সময় সে নিজেকে একবার সেনা কর্মকর্তা, আরেকবার এশিয়ান টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান হিসেবে পরিচয় দেন। পরে তাকে বায়েজিদ থানায় হস্তান্তর করেন।
এছাড়াও জানা গেছে, এই কবির নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকার একটি ভবনেও অফিস করেন। কখনো নিজেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, কখনো টিভি সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ কার্যালয়, নগরীর বিভিন্ন থানায় তার অবাধ যাতায়াত রয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে নগরীর কোতোয়ালী থানায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগেও গ্রেফতার হয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কিছুদিন আগে এশিয়ান টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছে তদবির নিয়ে যান আহমদ কবির। পরে কবিরের পরিচয় জানতে পেরে তাকে তিরস্কারও করেছিলেন এই কর্মকর্তা।
এসব বিষয়ে জানতে আহমেদ কবিরের ব্যবহৃত গ্রামীণ ফোন নম্বর শেষের দুই ডিজিট ৭৫ নম্বরে গত এক সপ্তাহ যাবত ফোন করলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।