October 9, 2024 - 12:25 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসারাদেশ ও রাজনীতিসারাদেশপ্রতিবেশীর অত্যাচারে সংখ্যালঘু প্রতিবন্ধী নারীর মানবেতর জীবন-যাপন

প্রতিবেশীর অত্যাচারে সংখ্যালঘু প্রতিবন্ধী নারীর মানবেতর জীবন-যাপন

spot_img

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর প্রতিবেশীর দ্বারা অত্যাচার ও দেড় বছর পূর্বে শৌচাগার ভেঙে দেয়ায় বৃদ্ধা মা ও পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন মালা রানী নামের এক সংখ্যালঘু প্রতিবন্ধী নারী।

দীর্ঘদিন ধরে এই অমানবিকতা চলতে থাকলেও উল্টো ওই প্রতিবন্ধী নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের‌ই নানা রকম হয়রানি করছেন গ্রাম প্রধানরা।

জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর শহরের মনিরামপুর ‌ঋষিপাড়ায় মৃত গুনীন সাধুর ছোট মেয়ে মালা রানী ভিক্ষাবৃত্তি করেন এবং তার স্বামী সুভাষ চন্দ্র মুচির কাজ করে কোনমতে সংসার চালান। অসুস্থ বৃদ্ধা মা এবং ৪ সন্তানকে নিয়ে খুবই কষ্টে একটি ভাঙ্গা ঘরে সবার বসবাস।

অভিযোগ রয়েছে প্রতিবেশী রিপন ও তপনের অত্যাচারে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এই পরিবারটিকে। মালা রানী ও তার পরিবারের সৌচাগার ভেঙে দিয়ে তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।’

মালা রানী অভিযোগ করে বলেন, তার পিতা গুলীন সাধু মৃত্যুর আগে দেড় শতাংশ জায়গা তার নামে লিখে দেন। বৃদ্ধা মা ও স্বামী সন্তানদের নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করেন। দরিদ্র মালার শৌচাগারটি কাঁচা হ‌ওয়ায় প্রায় দেড় বছর পূর্বে প্রতিবেশী রিপন ও তপন সেটা ভেঙ্গে দেয়। পরে নতুন করে শৌচাগার তৈরি করার চেষ্টা করলেও তাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

বিষয়টি ঋষি পাড়ার প্রধানদের জানিয়েও প্রতিকার পায়নি মালা রানী, উল্টো গ্রামপ্রধানরা রিপন ও তপনের পক্ষ নিয়ে তাদের‌ই নানা ভাবে হয়রানি করে চলেছেন।

এতে করে মালা রানী ও তার স্বামী সুভাষের উপরে অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বর্তমানে শৌচাগার না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অসহায় ঐ পরিবারটিকে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়।

মালা রানী আরো অভিযোগ করে বলেন, দফায় দফায় রিপন ও তপন আমাদের মারধর করে। এর আগে আমার হাত ভেঙে দিয়েছিল, তখন থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম। পুলিশ এলে গ্রামপ্রধানরা রিপন ও তপনের কাছ থেকে টাকা খেয়ে বিচার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেয়।

সরেজমিনে ঋষি পাড়ায় মালা রানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি জায়গায় জীর্ণ একটি ঘরে পরিবারের সবারই বসবাস। পাশেই আরেকটি আঙিনায় অভিযুক্ত তপন তার স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তপন ও তার ভাই রিপন বলেন, গুলীন সাধুর কাছ থেকে জায়গা ক্রয় করে কয়েক হাত বদল হয়ে আমার বাবা সন্তোষ কুমার তিন পোয়া শতাংশ জায়গা কিনে আমাকে দেন। সেই জায়গা মালা রানী খারিজ করতে বাধা দেয়ায় খারিজ বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় সে যদি আমাদের খারিজ করে দেয় তাহলে আমরা তাকে শৌচাগার তুলতে দেবো।

এসময় তারা মুঠোফোনে কল দিয়ে দেবাল নামের একজন প্রধানকে ডেকে আনে, প্রধান কিছুক্ষণ এই প্রতিনিধিদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে দেবাল নামের সেই প্রধান সুযোগ বুঝে সটকে পড়েন।’

পরে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় উক্ত জায়গাটির মূল মালিক মালা রানীর বাবা গুলীন সাধু। অনেকগুলো দলিলের মাধ্যমে বেশকয়েক দফা মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে তবে ইতিপূর্বে কেউ ই উক্ত জায়গাটি খারিজ করতে পারেনি। তবে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো মূল মালিক গুনীন সাধুর কাছ থেকে জায়গা ক্রয়ের কোন দলিল অথবা অন্য কোন প্রমান দেখাতে পারেনি অভিযুক্তরা। আর এ কারনেই খারিজ সম্পন্ন করতে নির্যাতনের এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে।

উপায়ান্তর না দেখে এই অমানবিক অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং পরিবার নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে প্রতিবন্ধী মালা রানী ও তার ভুক্তভোগী পরিবারটি শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাননীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এই বিষয়ে শাহজাদপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ জহরলাল হোসেন বলেন, শৌচাগার ভেঙে দেয়া বা পুনরায় নির্মাণ করতে বাধ্য দেয়া অত্যান্ত গর্হিত কাজ। আমি মালা রানীর মানবেতর জীবন-যাপন বিষয়টি আমি জানতাম না, আমি দ্রুত উদ্দোগ নিয়ে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করবো।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ