বর্তমানে আমাদের সমাজে ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে কিশোরী, শিক্ষার্থী থেকে গৃহবধু বাদ যাচ্ছে না কোন শ্রেণিই। ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর ভুক্তভোগী অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে প্রতিকার নেয়া থেকে বিরত থাকে। আবার ধর্ষক যদি হয় প্রভাবশালী তখন ধর্ষিতারা প্রাণনাশের আশঙ্কায় নিজেদের আড়াল করে রাখে সঙ্গত কারণেই। এই সকল তথাকথিত প্রভাবশালীদের কারণে অনেকে জীবনের সর্বস্ব হারিয়েছেন। প্রতিকার না পেয়ে জীবনের বাকী দিনগুলি পার করছে অসহ্য যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা। এখানেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল হয়তো এটিও থেকে যাবে অজানার অন্তরালে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে আইনের আশ্রয় নিতে গেলে সেখানে ধর্ষক তথাকথিত প্রভাবশালী হওয়ার কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা প্রথমে বিষয়টি আমলেই নিতে চাননি। পরবর্তীতে ধর্ষিতাদের সাহসী ভূমিকার কাছে পরাস্ত হয় তারা।
অভিযুক্তরা ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। চলছে আইন প্রক্রিয়া। কিন্তু আশঙ্কার জায়গায় থেকে যায় ঐ প্রভাবশালী শব্দটি। যদিও এই তথাকথিত প্রভাবশালী শব্দটি এখন দ্বৈত অর্থে ব্যবহৃত হয়। এক. অনৈতিকভাবে অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে সমাজে নিজের ক্ষমতার বহি:প্রকাশ ঘটানো। দুই. নিজের ইচ্ছেমত কুকর্ম অবলীলায় চালানো এবং সেটি আড়াল করতে দ্বিতীয়বার অনৈতিকতার আশ্রয় নেয়া। এদের সংখ্যা কম হলেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে গোটা সমাজে। এদের হিং¯্র দাবায় ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা, বিঘ্নিত হচ্ছে শান্তিপ্রিয় মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা।
সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে এই সকল তথাকথিত প্রভাবশালীদের ক্ষমতা খর্ব করার দায়িত্ব সরকারকেই পালন করতে হবে। তাদের দম্ভোক্তি ‘আমাদের হাত অনেক লম্বা’ কে খাটো করতে হবে। অবৈধ আয়ের উৎস বন্ধ করতে হবে চিরতরে। স্বীকৃত অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই সমাজে সত্যিকারের শান্তির সহাবস্থান নিশ্চিত হবে।
বনানীর ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া পদক্ষেপ নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ধর্ষিতারা ন্যায় বিচার পাক, অন্যায়কারীর সাজা হোক দৃষ্টান্তমূলক সেটাই দেশের সর্বস্তরের মানুষের একান্ত বাসনা। সেই সাথে ধর্ষিতারা যেন সমাজে নিন্দিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে সবাইকে।