রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকাতে চলছে গ্যাসের সংকট। বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে শীত মৌসুমে গ্যাসের সংকট বোধহয় একটু বেশিই দেখা দেয়। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাতে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর ও পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাতে গ্যাস সংকট চরমে উঠেছে। এতে করে এসব এলাকার বহু মানুষকে এক যন্ত্রণাময় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবার কিছু সিএনজি স্টেশনগুলোতে রয়েছে গ্যাসের কম চাপ। শুধু ঢাকাতেই এরকম চিত্র নয়; চট্টগ্রাম ও সিলেট নগরীর কিছু এলাকাতেও বিরাজ করছে এমন অবস্থা।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় ছয় কোটি ঘনফুট কম গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহ না বাড়ালে এ সংকট চলতেই থাকবে। তিতাস আরো জানায়, শীতে গৃহস্থালি কাজে গ্যাসের ব্যবহার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাপমাত্রাও অন্য সময়ের তুলনায় কম থাকে। এই তাপমাত্রায় রান্নার সময়কাল বেড়ে যায়। এতে গ্যাসের ব্যবহারও বাড়ে। গ্যাস-সংকটের আরও একটি কারণ হচ্ছে, সব সার কারখানাসহ শিল্পকারখানা চালু রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতেও গ্যাস ব্যবহার চলছে পুরোদমে।
গ্যাস সংকটের কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনছেন। কেউ কেউ যখনই গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছেন তখনই রান্নার কাজ সেরে ফেলছেন। মাঝে মাঝে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া গেলে তাও থাকছে অল্প সময়ের জন্য। এতে করে অল্প পরিসরে রান্নার কাজ করতে হয়, যা দিয়ে সার্বিকভাবে রান্না বা গৃহস্থালির কাজ করা প্রায়ই অসম্ভব।
অন্যদিকে, রাজধানীর কয়েকটি এলাকার সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সিএনজি চালিত গাড়ির মালিক ও চালকদের। রাজধানীর বাইরে সাভারের নবীনগর বাইপাইল থেকে চন্দ্রা মোড় এলাকা, টঙ্গী, গাজীপুর, মেঘনাঘাট, দাউদকান্দি ও গৌরীপুর এলাকার সিএনজি স্টেশনগুলোতেও একই চিত্র। আর এর প্রভাব সাধারণ যাত্রীদের উপরেও পড়ছে। বেশি দূরে কোথাও যেতে চাচ্ছেন না অনেক সিএনজি চালক, আবার গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন কেউ কেউ।
সার্বিক পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে, এ ধরনের সংকট কতখানি গুরুতর একটি সমস্যা। এ রকম চলতে থাকলে জনজীবনের সংকট আরো বাড়তে পারে। সংকট নিরসনে তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র গ্যাস সরবরাহের তাগিদ দিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, চাহিদা ও সরবারহের মধ্যে এত বিস্তর পার্থক্য কেন? এর আগে কি বিষয়টি নিয়ে কেউ ভেবে দেখেননি? অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে, সামনে চাহিদা আরো বাড়বে। তখন এর সরবরাহের কি হবে? গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর দায়িত্ব সরকারের। সরকারকেই এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। যদি পর্যাপ্ত সরবরাহ করা না যায় তাহলে বিকল্প ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হবে। আর নিতে হবে সে অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা। পাশাপাশি রাজধানীবাসীকেও গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। অযথা চুলা জ্বালিয়ে রাখা কখনই উচিত নয়। অনেকে আছেন এ শীত মৌসুমে বাড়তি উষ্ণতার জন্য অযথা চুলা জ্বালিয়ে রাখেন যা একেবারেই অনুচিত।
গ্যাসের যে চাহিদা রয়েছে সে অনুযায়ী সরবরাহ না করা গেলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো যেতে পারে। তবে তা ন্যায্য মূল্যের হতে হবে, যেন জনসাধারণের ক্রয়সীমার নাগালে থাকতে পারে। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্যাসের এই সংকট নিরসন করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে এখন সরকারের তৎপরতাই ভুক্তভোগীদের কাম্য।