গবেষক হাকিম আসলাম এলাহী সুমন ।।
ভাষানুযায়ী নাম: বাংলা-জায়ফল, English-Nutmeg. botanical-myristica fragrans, family-myristiceae.
পরিচিতি: জায়ফল ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু গাছ। পাতা অনেকটা কাঁঠালপাতার মতো এবং উপরিভাগ সবুজ ও নিচের দিকটা হলুদ ও ধূসর বর্ণের । ছোটো হলুদ বর্ণের হালকা সুঘ্রাণাযুক্ত ফুল হয় এবং ফল ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা গায়ে ডোরাকাটা থাকে।বর্ষার আগে ফুল এবং পরে ফল হয় ফল পাকলে ফেটে য়ায় এবং বীজাবরণ থেকে জৈত্রি ঝরে পড়ে। জায়ফল বীজ ও জৈত্রি ব্যবহার হয়।
প্রাপ্তস্থান: জায়ফল-ভারত, সুমাত্রা, মালয় ও আমেরিকার উষ্ণ প্রধান অঞ্চলে জম্মে।
জায়ফলে বিদ্যমান রাসায়নিক রেডিক্যালগুলো: জায়ফলে রয়েছে ৫-১৫ শতাংশ উদ্বায়ী তেল। এই উদ্বয়ী তেলে রয়েছে আলফা-পাইনিন, মাইরিসসি, ভোলাটাইল
বিভিন্ন রোগে জায়ফলের ব্যবহার:
ডাইবেটিস রোগে : ৭৫ গ্রাম জায়ফলের তেল, ৭৫ গ্রাম মেথির তেল, ৬০ গ্রাম ধুতুরার তেল, সেইজ গাছের ফুল চূর্ণ ৩০০ গ্যাম, হিমসাগর গাছের পাতার নির্যাস ৪ লিটরি ধাতুরাজ গাছের পাতার নির্যাস ৪লিটার একত্রিত করে এতকটি তামার পাত্রে অল্পতাপে জ্বাল করে উহাতে ৮ গ্রাম স্বর্ণ ও ১২ গ্রাম শোধিত তাম্রচূর্ণ যোগ করতে হবে। ওই উপাদানগুলো যখন আচারের মতো রুপ ধারণ করে তখন পাত্র থেকে নামিয়ে ড্রায়ার মেশিনে শুকায়ে ডাস্ট মেশিনে চূর্ণ করতে হবে। ওই চূর্ণ ৫০০ মিগ্রা আকারের ক্যাপসুলে ভরতে হবে। এই ওষুধ অগ্ন্যাশয়ের বেটাকোষের ওপর সরাসরি কাজ করে। বেটা কোষ ধ্বংস হওয়াকে প্রতিরোধ করে এবং ধ্বংসকৃত বেটাকোষকে পুঃনসচল করে ইনসুলিন তৈরিতে সহায়তা করে। এ ওষুধ সেবনে প্যানক্রিয়াসের অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট রস নিঃসরণকারী ক্ষতিগ্রস্ত লোবিউল, অ্যালভিলি ও আইচলেসকে পুঃনসচল করে তোলে যার কারণে প্যানক্রিয়ার স্বাভাবিকতায় ফিরে আসে। যদি ডায়াবেটিসের মাত্রা ১২-এর ওপরে থাকে এবং রোগি যদি দিনে ২ থেকে ৩ বার ইনসুলিন ব্যবহার করে থাকেন , সে ক্ষেত্রে এক বেলার ইনসুলিন বা দিয়ে প্রতিদিন সকাল ও রাতে আহারের পর দুটি করে ক্যাপসুল সেবন করতে হবে। এ ওষুধটি আমার সোলমেট গবেষণাগারের সফল গবেষণাকৃত ৯৯%+ কার্যকারী সমূলে ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস আরোগ্যকারক। এ ওষুধটি টাইপ -১ ও টাইপ-২ এই দুই প্রকার ডায়াবেটিসই আরোগ্য করতে সক্ষম।
যৌন রোগে: ৪০০ গ্রাম জায়ফল চূর্ণ, ১০০ গ্রাম জায়ফল চূর্ণ, ১০০ গ্রাম লতাকস্তরী চূর্ণ সবগুলো উপাদান একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ৬ লিটার মধুতে জ্বাল করতে হবে। ওই দ্রবণ যখন আচারের মতো হয় তখন চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে কাচ/প্লাস্টিক পাত্রে সংরক্ষণ করে চা চামচের ১ চামচ পরিমাণে দিনে দু-বার সেবনে পুরুষের কাম শিথিলতানাশক, যৌন উত্তেজক, যৌনশক্তি বর্ধক, বীর্য, গাঢ় ও ঘনকারক,শুক্রাণুবর্ধক ও রতিশক্তিবর্ধক হিসেব বিশেষ কার্যকারী। এটি মহিলারা সেবন করলে তাদেরও যৌনশক্তি বৃদ্ধিসহ যৌনাকাঙ্খা বৃদ্ধি পায়।
প্যারালাইজড রোগ: ৮০০গ্রাম জায়ফল ১ কেজি খাঁটি ঘি দ্বারা উত্তমরুপে চূর্ণ করে এতে ২০০ গ্রাম শোধিত শিলাজুত যোগ করে ৩ কেজি মধুতে জ্বাল করে আচার বা হালুয়া প্রস্তত করে চা চামচের ১ চামচ পরিমানে দেিন ৩ বার সেবনে সর্বপ্রকারের প্যারালাইজড, প্যারাপেলেজ ও হেমিপ্যারাপেলেজি সম্পূর্ণরুপে আরোগ্য হয়। এটা ছাড়াও জায়ফলের ২৫ গ্রাম তেল, লবঙ্গের ৫০ গ্রাম তেল তিল তেল২০০ গ্রাম একসাথে মিশিয়ে অনুভ’তিহীন অঙ্গে মালিশরুপে ব্যবহারে অনুভ’তিহীনতা নাশক হিসেবে কার্যকারী।
যকৃত রোগ: ৫০০ গ্রাম জায়ফল চূর্ণ,৩০০গ্রাম দারুহরিদ্রা চূর্ণ, ৫০০ গ্রাম কাঁচা ধনের রস ও ২ কেজি খাঁটি মধু একত্রে জাল করে হালুয়া প্রস্তুত করে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে সেবনে যকৃতের দুর্বলতানাশক, যকৃতের শক্তিবর্ধক হিসেবে বিশেষ কার্যকরী।
বাত রোগ: ৩০০ গ্রাম জায়ফল চূর্ণ ,১৫০ গ্রাম বিষ কচু চূর্ণ,৭৫ গ্রাম শোধিত ধুতুরা বীজ, ১০০ গ্রাম শোধিত কুচিলা বীজ চূর্ণ সবগুলো উপাদান একত্রিত করে ৫ লিটার কাঁচা অশর্^গন্ধা নির্যাসে জ্বাল করে শুকিয়ে চূর্ণ করে বাবলার গাম যোগ করে ৩০০মিগ্রা আকারের বড়ি/ট্যাবলেট প্রস্তত করে প্রতিদিন সকালে ও রাতে আহারের পর একত্রে দু-টি করে বড়ি/ট্যাবলেট সেবনে সর্বপ্রকারের বাত-ব্যাধি নাশক, ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ কারক, হাড় ক্ষয়নাশক নার্ভ ও আর্টারির ব্যথনাশক, মাংসপেশির ব্যথানাশক হিসেবে বিশেষ কার্যকরী। ওষুধটি সেবনকালে এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দেবে, এই জন্য অবশ্যই গ্যাসের ওষুধ সেবন করতে হবে।
লেখক: বিএসসি (অনার্স) ডিইসএমএস, ঢাকা ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, সোলমেট ইউনানি মেডিকেয়ার অ্যান্ড মেডিসিন রিসার্স ইনস্টিটিউট, শ্রীপুর, রাজবাড়ি।
আরও পড়ুন: