নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হলো প্রতিবাদী নাটক ‘স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা’। রাজধানীর সেগুন বাগিচায় বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটি অনুষ্ঠিত হয়।
মমতাজউদদীন আহমেদ এর রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম রফিক।
‘স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা’ নাটকে মূল ভূমিকায় এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অসাধারণ অভিনয় করেন চার্টার্ড সেক্রেটারি তৌহিদুল ইসলাম। একটি বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করে তার মেয়ে দীবা তাসমুম অয়ন্তী। ‘স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা’ নাটকে বাপ-বেটির অসাধারণ অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছেন সাধারণ দর্শক।
রাজা যায় রাজা আসে। তবু বদলায় না পৃথিবী। পাল্টায় না শাসক কিংবা শোষকের চরিত্র। তাই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অত্যাচারী শাসকের নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হয় আমজনতাকে। ক্ষমতাশালীর দাম্ভিকতায় বাসযোগ্য হয় না এই বিশ্ব। তার পরও অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে কেউবা সোচ্চার হয়ে ওঠে। সকল ভয়কে জয় করে রেখে যায় প্রতিবাদের দৃষ্টান্ত। এমন প্রতিবাদী দৃষ্টান্তের সঙ্গে জাতিগত বিদ্বেষ-বিভক্তি, ধর্মান্ধতাসহ সমাজ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবিময় এক নাটক স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা।
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় এক লেখককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে নাটকের ঘটনাপ্রবাহ। লেখক হলেও আদতে সে কলমপেষা দাস বা মজুর। ঘটনাক্রমে রাষ্ট্র ও ক্ষমতাতন্ত্রের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। মানবিকতাহীন সেই রাষ্ট্রযন্ত্রে ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থানকারী সূর্যকুন্ডু নিজেকে ত্রাতা ও দাতা হিসেবে দাবি করেন। নিজের সম্পর্কে চালাতে থাকেন মিথ্যা প্রচারণা। এই দাম্ভিক শাসক সূর্যকুন্ডুর আত্মজীবনী লেখার দায়িত্ব বর্তায় লেখকের ওপর। যেখানে থাকবে স্তুতিবাক্য আর বিশেষণের সমাহার। লেখনীর মাধ্যমে ভয়ংকর মানুষটিকে দাতারূপে উপস্থাপন করতে হবে। সেই প্রশস্তি কাহিনী রচনার জন্য লেখকের ওপর আদেশ জারি করা হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বে মিথ্যা প্রচারণামূলক সেই লেখা লিখতে হয় লেখককে।
অন্যদিকে স্বপ্নভঙ্গের অমানিশা তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। এক সময় লেখকের ভাবনার জগতে এসে হাজির হয় ঐতিহাসিক চরিত্র আফ্রিকার বিপ্লবী কবি প্যাট্রিস লুমুম্বা। কালো মানুষের অধিকারের কথা বলে গিয়ে খুন হয়েছিলেন ঔপনিবেশিক আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত এই কবিকে। লেখকের মধ্যে সৃষ্টি হয় আত্মদ্বন্দ্ব। তার চেতনসত্তায় আর্তনাদ করে ওঠে প্যালেস্টাইন, ভিয়েতনাম ও লাতিন আমেরিকার মুক্তিকামী মানুষেরা। অন্যদিকে শিউলি নামের চরিত্রের মাধ্যমে উঠে আসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা নারীর দুরবস্থার চিত্র। অবশেষে মুক্তির গান গাইতে আবির্ভূত হয় ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ও রোম দাস বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক ‘স্পার্টাকাস’।
এই স্পার্টাকাস পরাক্রমশালী সম্রাট ক্রেসাস ও পম্পির কথা উল্লেখ করে স্মরণ করিয়ে দেয় দ্রোহের ভয়াবহ পরিণতির কথা। তবু বিদ্রোহী হয়ে ওঠে লেখক। জানিয়ে দেয় পরিণতি ভোগ করতে হলেও সে আর সূর্যকুণ্ডর বিশাল থাবার নিচে ইঁদুর হয়ে বসে থাকবে না। অতঃপর রোবটসদৃশ প্রভুর হাতে খুন হতে হয় তাকে। মৃত্যুকালে অস্ফুট স্বরে তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘পবিত্র পৃথিবীর মৃত্যু নাই’।