নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রম আদালতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিচার চলবে। অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়া বৈধ বলে যে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট, তা বহাল রেখেছেন উচ্চ আদালত।
মামলার অন্য তিন আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
রোববার (২০ আগস্ট) সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। সেই সঙ্গে গত ৮ আগস্ট এ মামলা বাতিল চেয়ে ড. ইউনূসের মামলা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
এ সময় ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের এ মামলায় গত ৬ জুন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক। পরে অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূসসহ চারজন।
এর শুনানি নিয়ে গত ২৩ জুলাই বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুল দেন। রুলে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলার বাদীসহ প্রতিপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত ৩ আগস্ট এ মামলায় জারি করা রুল দুই সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এই রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে আবেদনে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি সাহেদ নুর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে রায় দেন।
এর আগে ৬ আগস্ট ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন কেন বাতিল করা হবে না- এ মর্মে জারি করা রুল শুনানির দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। পরে ৭ আগস্ট ড. ইউনূসের পক্ষে তার আইনজীবী রুলের শুনানি শেষ করেন।
৩ আগস্ট ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না- মর্মে হাইকোর্টের জারি করা রুল শুনানির জন্য আদালত পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ২৫ জুলাই আপিলটি করা হয়। আবেদনে রুল স্থগিত চাওয়া হয়েছিল। ওইদিনউ রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে করা আবেদন শুনানি নিয়ে শ্রম আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি করতে ৩ আগস্ট দিন ঠিক করে পাঠান।
গত ২৩ জুলাই শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। তারও আগে ৬ জুন ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা ইসলাম। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়। এরপর ২১ জুন অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। আবেদনে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়।
লেবার আইনের ৪-এর (৭) এবং (৮) ধারায় শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়নি এবং ১১৭ জনকে আর্নলিভ দেওয়া হয়নি। আর ২৩৪ ধারা অনুযায়ী তাদের মুনাফার ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি- এসব কারণে গঠন করা হয় অভিযোগ। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি।
এছাড়া কর্মচারী অংশীদারিত্ব ও কল্যাণ তহবিল গঠন এবং কোম্পানির ৫ শতাংশ লভ্যাংশ কর্মচারীদের পরিশোধ করা হয়নি। পরে, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কলকারাখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এসএম আরিফুজ্জামান মামলা দায়ের করেন। গত ৬ জুন ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।