তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: আরও দেড় বছর থাকছেন বর্তমান আইজিপি, নাকি নতুন কেউ আসছে? বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সুনামগঞ্জের সন্তানের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১১ই জানুয়ারি। তবে নির্বাচনের বছর নতুন কেউ দায়িত্বে আসছেন, নাকি বর্তমান আইজিপির মেয়াদ বাড়ানো হবে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। এমনকি পরবর্তী পুলিশ প্রধান হিসেবে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে।
গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। আগামী ১১ জানুয়ারি তার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে মাত্র তিন মাসের মাথায় নতুন আইজিপি কে হচ্ছেন তা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা থাকবে অগ্রগণ্য। এটি বিবেচনায় নিয়েই পরবর্তী আইজিপিকে দায়িত্ব দেবে সরকার। ফলে বর্তমান আইজিপিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে, নাকি নতুন কেউ দায়িত্ব পাচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সরকারের নীতিনির্ধারকরা সম্ভাব্য নতুন আইজিপির প্রোফাইল যাচাই-বাছাইয়ের কাজ গুটিয়ে এনেছেন। এছাড়া বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও।
সূত্র মতে, পুলিশ সপ্তাহ চলার মধ্যেই নতুন আইজিপি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে জোর আলোচনা চলছে। অন্তত অর্ধ ডজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমান আইজিপির নামটিও রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে তাকে আরও এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আছে। পুলিশের একটি অংশও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অন্তত এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে বলে জানা গেছে।
তবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ছাড়াও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান, এসএম রুহুল আমিন, মনিরুল ইসলাম, মল্লিক ফকরুল ইসলাম, এম খুরশিদ হোসাইন, খন্দকার গোলাম ফারুক ও হাবিবুর রহমান রয়েছেন।
এরমধ্যে কামরুল আহ্সান পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) হিসেবে এবং অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এই দু’জনের মধ্যে কামরুল আহসান বর্তমান পদে আসার আগে এটিইউর প্রধান ছিলেন। তিনি শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপারের পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন এবং ট্রেনিং), সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এটিইউ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন সিএমপির ডিসি, সিলেট জেলার এসপি, ঢাকায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া মনিরুল ইসলাম পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নীলফামারী জেলার পুলিশ সুপার, ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ), গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গোয়েন্দা পুলিশ এবং ডিএমপির সিটিটিসির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ দক্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তার হাতেই গঠিত হয়েছিল সিটিটিসি। এ ছাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার আগে-পরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির বড় বড় জঙ্গি আস্তানা তার নেতৃত্বেই গুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতৃস্থানীয়দের গ্রেপ্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সজ্জন ব্যক্তি ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার বিশেষ সুনাম রয়েছে।
মল্লিক ফকরুল ইসলাম হাইওয়ে প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি র্যাব-৩-এর অধিনায়ক ছিলেন। তা ছাড়া তিনি ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ফেনী জেলার এসপি, রেলওয়ে রেঞ্জে ডিআইজি, সিটি এসবি ও ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এম খুরশিদ হোসেন র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
খন্দকার গোলাম ফারুক ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর, সারদা পুলিশ একাডেমির পিন্সিপাল ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
হাবিবুর রহমান টুরিস্ট পুলিশের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে হাবিবুর রহমান তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। তাছাড়া সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নিয়ে তার কাজ প্রশংসিত।