নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় সহায়তার জন্য ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করা হয়েছে। অনেক কোম্পানি এখনো এই ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের অবন্টনকৃত লভ্যাংশের টাকা এবং বোনাস-রাইট শেয়ার স্থানান্তরে গড়িমসি করছে। কোম্পানিগুলোতে নীরিক্ষা চলছে। এটি শেষ হলেই খেলাপী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ভবনের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত “সিএমএসএফের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। বিনিয়োগকারীরা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাক তা আমরা চাই না। তিনি ফ্লোরপ্রাইসের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এটি তুলে দিলে হয়ত বাজারে লেনদেন বাড়বে, তাতে ব্রোকারহাউজগুলোর ব্যবসাও বাড়বে। কিন্তু নিঃস্ব হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই আমরা এটা বহাল রেখেই বাজারে কীভাবে লেনদেন বাড়ানো যায় সে চেষ্টা করছি।
তিনি সিএমএসএফ সম্পর্কে বলেন, তারা নিজস্ব টাকায় বাজারে বিনিয়োগ করছে না। তারা বিনিয়োগকারীদের আমানতের (লভ্যাংশ) হেফাজতকারী হিসেবে কার্যক্রম পরিচালন করছে। তাই তাদের কাজে স্বচ্ছতা ও সুনাম রক্ষা করা খুবই জরুরী। এ কারণে তাদেরকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্র ন্যুনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে এই শর্ত দেওয়া হয়েছে। কারণ কিছু দুষ্ট লোকের যোগসাজশে প্রতারণা করে অনেক কোম্পানি বাজারে আসে। তারপর বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে কোম্পানি চাপিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়৷
সিএমএসএফের সভাপতি মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
সেমিনারে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন বলেন, অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিত, কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম উঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়।
বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে সিএমএসএফ গঠন করা হয়েছে। তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে টেকনোলজিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে আগামীতে বড় বড় শিল্প স্থাপনের দিকে যেতে হবে। এসব শিল্পের জন্য যে মূলধন প্রয়োজন হবে, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তার জন্য পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে হবে।
সেমিনারে সিএমএসএফ’র রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট কমিটি (আরএমসি) চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আমিনুল করিমের স্বাগত বক্তব্যের পর বিওজি এবং আরএমসি সদস্য ডাঃ শেখ তানজিলা দীপ্তির সিএমএসএফের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো- শিরোনামে একটি মূল প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।
এসময়, প্রধান অতিথি, সম্মানিত অতিথি এবং বিশেষ অতিথিরা সিএমএসএফ এর সময়োপযোগী উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফ্রেমওয়ার্ককে সমৃদ্ধ করার বিষয়ে মূল্যবান দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
চেয়ারম্যান সিএমএসএফ উপস্থিত সকলকে তাদের মূল্যবান মতামত এবং দিকনির্দেশনার জন্য ধন্যবাদ জানান।