নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে ট্যারিফ পলিসি করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি, ২০২৩’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (১৭ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি, ২০২৩ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমাদের ট্যারিফ কমিশন আছে। তারা এ সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ পরামর্শ প্রক্রিয়ায় আমাদের নির্দিষ্ট কোনো পলিসি ছিল না। আমরা এতদিন যে কাজগুলো করেছি সেটা সময় সময় সরকারের যে বাণিজ্যনীতি, রপ্তানি নীতি, শিল্পনীতি বা আমদানিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ট্যারিফ পলিসির খসড়া উপস্থাপন করা হয়। মূলত চেষ্টা করা হবে বাংলাদেশের শিল্পায়নকে সহায়তা করে এরকম একটি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা বাজারে যাতে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে পারে, সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ট্যারিফ পলিসির একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছেন। আজ সেই ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি, ২০২৩ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশে প্রথম করা হলো।
ট্যারিফ পলিসির প্রয়োজনীয়তা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এলডিসি গ্রাজুয়েশন করেছি। এখন আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে সুযোগসুবিধা পাই, সেটা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। তারপর সরাসরি প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হবে। তখন বাজার ধরে রাখতে এবং বাজার সম্প্রসারণ করতে চাইলে আসাদের এখন যে ট্যারিফ কাঠামো আছে সে কাঠামোতে কিছু সংযোজনের প্রয়োজন আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সেজন্য একটি সুপারিশমালা তৈরি করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে আমরা শুল্ক ও কর কাঠামোয় ধাপে ধাপে সেদিকে অগ্রসর হবে।
এখানে কয়েকটি বিষয় নজরে আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্য উদারিকরণ, ট্যারিফ কাঠামো যুক্তিকরণের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগে উৎসাহীতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই অর্থনীতি অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ ট্যারিফ পলিসি নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ট্যারিফ পলিসিতে ১৭টির মতো নীতি রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মনিটরিং ও অডিট কমিটি করা হয়েছে। সেখানে ১৬ সদস্যের কমিটিতে একজন সচিব, এফবিসিসিআইয়ের একজন সদস্য, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান রয়েছেন, তারা মনিটরিংয়ের কাজটি করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে আরোপিত ট্যারিফকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ট্যারিফ হিসেবে গণ্য হবে। শুল্ক কাঠামো সহজীকরণ ও অপ্রয়োজনীয় জটিলতা নিরসনের উদ্দেশ্যে সমজাতীয় পণ্যে শুল্ক কর যথাসম্ভব সমান রাখার মাধ্যমে শুল্ক ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনতে হবে। ভোক্তার কল্যাণার্থে আমদানি পর্যায়ে আরোপিত ট্যারিফ ধাপে ধাপে যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস করতে হবে। শুল্ক রেয়াত পরিহার করতে হবে।দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুল্ক প্রতিরক্ষণ হার ধাপে ধাপে কমাতে হবে।
এছাড়া রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে রপ্তানিনীতির ২১ থেকে ২৪ এর ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে যেটা আছে এবং আমদানি আন্তর্জাতিক ও দেশি উভয় বাজারে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পসমূহকে কেবল রপ্তানির উদ্দেশ্যে কাঁচামাল আমদানির নিমিত্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত শুল্কের ভিত্তিতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি বন্ডসই করতে হবে। যোগ করেন মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ (অধস্তন কর্মচারী) কল্যাণ তহবিল আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ‘জেলা (চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলাসমূহে বলবৎকরণ) আইন ২০২৩’ এর খসড়ার নীতিগত চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।