কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন পয়ঃশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম একক পয়:শোধন কেন্দ্র (এসটিপি) উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা ওয়াসার ‘দাসেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার’ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়েরেজ অথোরিটি (ওয়াসা)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান মঙ্গলবার (১১ জুলাই) এক ব্রিফ্রিংয়ে বলেন, দেশে এটাই প্রথম এ ধরনের প্লান্ট। যা রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করবে।
ঢাকার আফতাবনগরে তার অফিস সাইটে প্লান্ট সম্পর্কে বলেন, প্লান্টে দৈনিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পয়ঃশোধন প্রক্রিয়ার ক্ষমতা আছে-যা রাজধানীর মোট পয়ঃশোধনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।
ঢাকা ওয়াসা প্রধান নির্বাহী আরো বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার শতভাগ পয়ঃশোধন প্রক্রিয়ার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী পাগলা, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুর এলাকায় একটি করে আরও চারটি পয়ঃশোধন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
প্ল্যান্টটি ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্য-৬ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে একটি সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার আওতায় আনার পথপ্রদর্শক।
তিনি আরো বলেন, ‘এ ধরনের একক পয়ঃশোধানাগার প্লান্ট দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম এবং এটিই সেরা।
তাকসিম বলেন, প্লান্টটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও জনবান্ধব।
তিনি বলেন, ‘নর্দমা থেকে পরিশোধিত পানি বালু নদীর পানিতে পড়ছে- যা নদীর পানির গুণগতমান বাড়ানোর পাশাপাশি পানি সুপেয় করে তোলে।’
পাগলা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং রায়েরবাজারের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার প্রধান নির্বাহী বলেন, সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাই অ্যাশ, পয়ঃশোধনের উপজাত, সিমেন্ট কারখানায় বিক্রি করা হবে। পরে তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঢাকা ওয়াসা তাদের কার্যক্রমের ৭০ শতাংশ ডিজিটালাইজড করেছে।
পদ্মা ও সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সম্পূর্ণ অটোমেটেড করা হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে সরকারের যাত্রায় আমরা সঙ্গী।
দাশেরকান্দি শোধানাগার প্ল্যান্ট- যা খিলগাঁও থানার অন্তর্গত, আফতাবনগর সংলগ্ন এবং গুলশান (একাংশ), বনানী, তেজগাঁও, নিকেটন, মগবাজার, মালিবাহ, আফতাবনগর, বাড্ডা, কলাবাগান, পান্থপথ, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার পয়ঃশোধনের ব্যবস্থা করবে।
চীনের অর্থায়নে ৩,৪৮২.৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬২.২ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এই অর্থের ১,১০৬.৪২ কোটি টাকা জিওবি তহবিল থেকে, ১০ কোটি টাকা ওয়াসার তহবিল থেকে। এছাড়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পটির বাকি ২,৩৬৬ কোটি টাকা ব্যাংকটি থেকে সহায়তা হিসাবে আসবে।
প্রকল্পটিতে প্রতিদিন প্রায় ৫৬০ টন প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতাসহ একটি স্লাজ ড্রাইং-বার্নিং সিস্টেম রয়েছে। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। পাওয়ার চায়নার অধীনে চেংডু ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন দ্বারা ডিজাইন ও নির্মিত প্রকল্পটি এক বছরের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকার চারপাশে নদী দূষণ রোধে পাঁচটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে ওয়াসার মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে দশেরকান্দি পয়ঃশোধানাগার প্লান্টটি নির্মিত হয়েছিল।
প্রকল্প অনুযায়ী, প্রগতি সরণিতে রামপুরা সেতুর পশ্চিম পাশে একটি বর্জ্য উত্তোলন স্টেশন, রামপুরা থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ট্রাঙ্ক স্যুয়ার লাইন এবং দশেরকান্দিতে মূল শোধনাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে মার্কিন প্রতিনিধিদল
ঢামেককে ৪ হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতালে পরিণত করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী