কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : সাংবাদিকরা চাইলে সহজ কিস্তিতে সরকারি ফ্ল্যাট কিনতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে অনেকেই প্লট পেয়েছেন, কেউ কেউ তা বিক্রিও করেছেন। সরকারিভাবে অনেক ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছে। সামান্য কিছু টাকা জমা দিয়ে সাংবাদিকরা চাইলে কিস্তিতে পরিশোধ করে এসব ফ্ল্যাট নিতে পারবেন।
সোমবার (১০ জুলাই) সকালে তাঁর কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা ভাতা বা অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যাম সম্মেলনের জন্য যখন আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করি। তখনই আমার একটা লক্ষ্য ছিল যে, সম্মেলনটা হওয়ার পর ফ্ল্যাটগুলো আমরা আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। আসলে তাদের চাকরির তো কোনো স্থায়িত্ব থাকে না। তারা যখন বয়োবৃদ্ধ বা অসুস্থ হয়ে যায় তখন কী করে চলবে, তার নির্দিষ্ট কোনো সুযোগই থাকে না। সরকারি চাকরি যারা করে তারা তো অবসর ভাতা পায়। আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্যও যেমন কিছু থাকে না তেমনি সাংবাদিকদের জন্যও কিছু থাকে না। এটাই হলো বাস্তবতা। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাদের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু আমরা কীভাবে চলব, কোথায় থাকব? এখন গণভবনে আছি ভালো কথা। এখান থেকে গিয়ে উঠবো কোথায়? সেই জায়গাটাও তো নেই।
তিনি বলেন, যাই হোক আমি নিজের জন্য চিন্তা করি না। কিন্তু আমি সবার জন্য ভাবি। আমি আপনাদের বলব, আপনারা সাংবাদিকরা যদি সরকারি ফ্ল্যাট কিনতে চান। যেগুলো আমরা তৈরি করছি এবং বিক্রি করছি। তাহলে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করে কিনতে পারবেন। প্রথমে সামান্য কিছু (টাকা) দিলে। বাকিটা কিস্তিতে দেওয়া যাবে। আমরা সেই ব্যবস্থাটা করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রকে বলে সমাজের দর্পণ। বাস্তবে তাই। এই সংবাদপত্র দেখলেই অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আমি নিয়মিত শুধু পড়িই না, কোন সমস্যা দেখলে তার ছবি তুলে আমার অফিসের কার কাছে পাঠালে কাজ হবে তার কাছে পাঠিয়ে দেই। সংবাদপত্র থেকে এই সংবাদগুলো পাওয়া যায়। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সহজ হয়।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও মুখাপেক্ষী না, কারও অধীনস্থ না। অন্যের কাছে নালিশ করে নিজের দেশের বদনাম করা, সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রেও আপনারা এমন কিছু লিখবেন না যাতে নিজের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কোথাও খারাপ কিছু দেখলে অবশ্যই আপনারা বলবেন, কিন্তু এমন কিছু না বলা যাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সমালোচনা ভালো, কিন্তু সেটি গঠনমূলক হাওয়া উচিত। সেই সমালোচনার মধ্য দিয়ে সংশোধনীর সুযোগ থাকতে হবে। অপজিশন তো বলবেই। তারা সারাদিন কথা বলে। টকশোতে যা খুশি ইচ্ছামতো বলে যাচ্ছে। সব বলার পরও বলবে কথা বলার স্বাধীনতা নেই। তো স্বাধীনতাটা ছিল কখন? আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান নাকি এরশাদের আমলে ছিল?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করার সময় সংবাদপত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। তখন অবাধে সংবাদ যাতে প্রকাশিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে তিনটি প্রাইভেট চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি, তারপর এটি বাড়ানো হয়েছে। সেই সময় অনেকে বাধা দিয়েছিল যে, প্রাইভেটে টিভি চ্যানেল দেওয়া ঠিক হবে কি না? আমি যখনই যে কাজ করেছি সেখানে লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তখন আমি বলেছিলাম, যত বেশি টেলিভিশন দিতে পারব সেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বহু ধরনের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সাংবাদিক, শিল্পী, টেকনিশিয়ানসহ বহু ধরনের মানুষ কাজ পাবে তাদের জীবন চলতে পারবে। সেভাবে আমরা টেলিভিশনটা উন্মুক্ত করে দেই।’
সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি। তখন দেশে শুধু একটি টেলিভিশন ছিল। সেটিও সরকারি টেলিভিশন। আমরা তো আবার ভুলে যাই। ছয় ঋতুর দেশ, ঋতুও বদলায়, মনও বদলায়, স্মৃতিশক্তিও লোপ পায়। তখন সংবাদপত্র ছিল মাত্র কয়েকটি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক সংবাদপত্র অফিস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছিল। জাতির পিতা সমস্ত সাংবাদিকদের সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং চাকরির সুযোগও করে দিয়েছিলেন। জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল এ দেশের মানুষের যেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকে।
আরও পড়ুন:
স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী