জে.জাহেদ : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মাঝখানে বহমান নাফ নদী। এক সময় ভ্রমণে গিয়ে দেখলাম ওপারে মিয়ানমারের সীমানা কাঁটাতারের বেড়ায় সুরক্ষিত। সীমান্তে পাহারায় থাকা এক বিজিবি সদস্যের কাছে জানলাম, আমাদের সীমান্তের নাকি প্রায় ১৬/১৮ কিলোমিটার অরক্ষিত আর উন্মুক্ত। বিষয়টি জেনে অবাক হলাম।
কেননা স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও আমরা আমাদের দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে পারিনি। যদিও সার্বক্ষনিক আমাদের বিজিবি, কোস্টগার্ড-পুলিশ দায়িত্বে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক। যা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশ। হুমকিতে পড়েছে যুব সমাজ।
তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী বর্বর নির্যাতন চালালে উন্মুক্ত সেই বর্ডার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ জন রোহিঙ্গা। উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকার তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাসহ মানবিক সাহায্য দিতে এগিয়ে আসে এবং এখনো সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মানবতার ডাকে দেশের মানুষসহ বিদেশীরাও এগিয়ে আসেন।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে উক্ত ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা একের পর এক নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ক্যাম্প থেকে বের হয়ে তারা স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যেতে চেষ্টা করছেন। কক্সবাজারে বসবাস করা বাংলাদেশী নাগরিকের সাথে দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও একটু চিন্তিত হয়ে পড়লেন। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে নিরাপত্তা দেওয়া ও নজরদারিতে রাখা! পাশাপাশি পুরো কক্সবাজার শহরকে নিরাপদে রেখে সাধারণ মানুষের মাঝে পুলিশে আস্থা বাড়ানোর মতো কাজটি কঠিন ছিল পুলিশের পক্ষে।
এর মধ্যে আবার মাদক পাচার বন্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা আর সফলতা বয়ে আনা। আরো রয়েছে বহুদিন ধরে সমুদ্রে পথে মানবপাচার। সাগর পথে দালালের ফাঁদে পড়ে কতইনা যুবকের সলিল সমাধি হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বঙ্গোপসাগরে প্রতিনিয়ত জলদস্যুদের হানা। কখনো কখনো কূলে ভেসে আসে জেলেদের লাশ। এমন কঠিন একটি সময়ে সরকার কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব তুলে দেন ২৪ তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের এ.বি.এম মাসুদ হোসেনের (বিপিএম বার) হাতে।
বরিশালের এই কৃতি সন্তান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেন। শুরুতেই কক্সবাজার টেকনাফ থেকে ইয়াবার দূর্নাম দূর করতে মাদকের প্রবেশদ্বার টেকনাফে জোরদার করেন মাদক বিরোধী অভিযান। সরকার বার বার ঘোষণা দেন যেকোন মূল্যে মাদক নির্মূল করতে হবে।
পাশাপাশি সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়া রোধে পুরো জেলায় অভিযান চালাতে শুরু করেন এসপি এবিএম মাসুদ। সাগরে জেলেদের মাছধরা নিরাপদ রাখতে জলদস্যুদের গ্রেফতারে বিভিন্ন সাড়াশি অভিযান চালান। অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধ ও কথিত ক্রসফায়ার ও গোলাগুলিতে গত ৩ মাসে মারা গেছে ৫১জন। কিন্তু নিহতদের সংখ্যা দিয়ে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। হয়তো বিষয়টি বুঝতে পেরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ভিন্ন কৌশলে আগাতে তৎপর হলেন।
উপরি মহলে নিয়োজিত নীতি নির্ধারকেরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিলেন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের দিকে। তখন স্থানীয়দের সাথে অনেকেই বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছিলেন। কেননা মাদকের স্বর্গরাজ্য খ্যাত কক্সবাজার টেকনাফ যেনো কিছুতেই আতঙ্কের নগরী না হয়। সেভাবেই কাজ শুরু পুলিশসহ সকল বাহিনী।
শুরু হল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার অভিযান। পুলিশের এ্যাকশনে অনেক মাদক কারবারী দেশ ছাড়েন। ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেন। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ইয়াবার বিস্তার অনেকটা কমতে শুরু করে যা টেকনাফের স্থানীয়দের দাবি। আর মাদক ব্যবসা করে যারা অবৈধ বিত্ত সম্পদের মালিক বনে গেছেন, সেসব ব্যবসায়ীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আনারও দাবি ছিল পাশাপাশি সচেতন মহলের। এত জটিল সময়ে কঠিন পথ ধরে চলছে এসপির পথচলা। যার উপরে সরকার মাদক নির্মূলে আস্থা রাখলেন, তিনি এত সহজে হার মানতে রাজি না। অভিযান চলছেই…
এসবের মধ্যেও কক্সবাজারে ৩ টাকা দিয়ে পুলিশে চাকরি দিয়ে পুরো জেলাজুড়ে আলোচনায় চলে আসেন এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন। অথচ এর আগে কক্সবাজারে এই কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়ম জড়িয়ে তৎকালিন এসপি সিএমপিতে বদলি হলেন। এত অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই পুলিশ নাকি মাত্র ৩টাকায় চাকরি দিলেন। কেউ প্রথম প্রথম বিশ্বাস না করলেও চাকরী পাওয়া হতদরিদ্র বহু পরিবারের সন্তানেরা যখন চোখে জল নিয়ে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিলেন তখন প্রশংসায় সাগরে ভাসেন এসপি মাসুদ হোসেন। পুরো জেলাজুড়ে রিয়েল হিরোতে পরিণত হলেন তিনি!
শুধু কি পুলিশে চাকরি। কক্সবাজারে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স সফল করতে একের পর এক পাহাড়ে জঙ্গলে অভিযান। মাদকের অন্ধকার পরিবেশ গুছিয়ে অনেকটা মাদক নির্মূলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন পুলিশ সুপার। কক্সবাজারের অনেকেই তা স্বীকার করেছেন মিডিয়া কিংবা সভা সেমিনারে। যদিও মাদক পাচার, মানব পাচার ও সাগরে জলদস্যুতা বন্ধে লাগাতার অভিযানে কিছু ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও কক্সবাজারের বর্তমান এসপি’র কারণে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ পুলিশের উপর আস্থা রাখতে শুরু করে।
যোগদানের কিছু মাস পরেই এসপির চৌকস পদক্ষেপে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে কয়েক হাজার মানুষের সামনে পুলিশের তালিকাভুক্ত ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন। ইয়াবা গডফাদারদের ৭৩ জনের মধ্যে প্রথম ধাপে সে সময় ৩০ জন মাদক কারবারী আত্মসমর্পণ করেন। সাগরে আর কূলের আতঙ্ক খ্যাত ৯৬ জন জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগর যখন পুলিশের আহ্বানে মহেশখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আত্মসমর্পণ করে, তখন কয়েক লক্ষ পরিবার বিধাতার কাছে নিশিরাতে হাত তুলে দোয়া করে কক্সবাজার পুলিশ সুপারের নাম ধরে।
আর এসবের কারণেই হয়তো ২০১৯ সালে দেশ সেরা পুলিশ সুপার নির্বাচিত হন কক্সবাজারের এবিএম মাসুদ হোসেন (বিপিএম-বার)। সাহসী এই কাজের জন্য দেশ জুড়ে সর্বস্তরের মানুষের সাধুবাদ পেয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার।
উনার অসাধারণ কর্মদক্ষতা জন্য পুরো দেশে তিনি হিরোতে পরিণত হন। দেশের একমাত্র জেলা পুলিশ সুপার পুলিশের সর্বোচ্চ পদকের জন্য মনোননীত হন। সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদক অর্জন করেন। পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ এ ৭ই জানুয়ারী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় উনাকে পদক প্রদান করেন।
পুলিশের তথ্য বলছে, গত এক বছরে কক্সবাজারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ২ হাজার ৩৭১ জন এবং উদ্ধার হয়েছে দেড় কোটিরও বেশী ইয়াবা, অস্ত্র ও গুলি। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৮২৪টি। নিহত হয়েছে দেড় শতাধিক।
এর মধ্যে মহামারি করোনা পৃথিবী জুড়ে আঘাত করল। করোনার এই সঙ্কটকালে সারাদেশে ফ্রন্টলাইনে কাজ করা পুলিশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশবাসীর কাছে। কেউ মারা গেলে নিজের আত্বীয় স্বজন পালিয়ে গেলেও পিছু হটেনি পুলিশ। ধারাবাহিক ভাবে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন এর নির্দেশে করোনাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জেলা পুলিশের ৬৯ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে কয়েকজন পুলিশের। এরপরেও থেমে থাকেনি জেলা পুলিশ।
জেলার অসংখ্য জনপ্রতিনিধি কিংবা বড় বড় নেতারা যখন করোনা ভয়ে মাঠে অনুপস্থিত। তখনও শহরের আনাচে কানাচে ঝুঁকি নিয়ে সরব ছিলেন একমাত্র কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। এমনকি জেলার সমস্ত পুলিশেরা ১৫ দিনের বেতন করোনাখাতে ব্যয় করে সেবা দিয়ে গেছেন। নিজস্ব উদ্যোগে পুলিশ সুপার সাধারণ মানুষের সেবা আর চিকিৎসায় ক্রয় করলেন একাধিক এ্যাম্বুলেন্স।
যখন পুলিশ সুপার এর নেতৃত্বে গোটা কক্সবাজারকে মাদক মুক্ত গড়ে তুলতে পুলিশের এই অবিরাম পরিশ্রম। অপরাধ কর্মে জড়িত অপরাধীরা যখন তাদের পাপের সাজা পাচ্ছেন। পর্যটন শহরে যখন ছিনতাই, ডাকাত, রাহাজানি, খুন ধর্ষণ অনেকটা কমে আসছে! সাধারণ মানুষকে নির্যাতনকারী, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী অপরাধীরা যখন পুলিশের ভয়ে তটস্থ। ঠিক তখনি ঘটল একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
গত ৩১শে জুলাই টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া পুলিশি চেকপোস্টে গুলিতে মারা যায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খাঁন। ঘটনার পর পরই মামলা ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও ওসি প্রদীপ দাশসহ ৭ পুলিশকে সাময়িক বহিষ্কার করে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে এসপি মাসুদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে জানানো ওসির একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ্যে আসলে রশি টানাটানি শুরু হয় এসপির ভূমিকা নিয়ে? নানা প্রশ্ন তোলা হয় এসপির সততা নিয়ে!
এ যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়া অবস্থা। এক প্রদীপ কান্ডে পুরো পুলিশ বাহিনী সাময়িক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। যত ভাল কাজেই করুক এসপি। সবই যেনো নক্ষত্রের পতন। একজনের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে ব্যস্ত অনেকেই। কিন্তু কারা হাজার হাজার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজ খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বেসিক কথাকে কাটছাঁট করে মানুষকে বিভ্রান্তি করতে কি শোনাচ্ছেন! তাদের পিছনে কারা অর্থ ব্যয় করছেন? তাদের উদ্দেশ্য মহৎ কিনা সেটাও প্রশ্ন থেকে যায়?
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনায় আসে ওসি প্রদীপ দাশের নানা তথ্যও। এতে নতুন করে নাম জড়ানো হচ্ছে পুলিশ সুপারের। যদিও জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে উনার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতেই পারেন। যেহেতু দায়িত্বে রয়েছেন দায় নিতেই হবে। কিন্তু ওসির অপরাধ এসপির কাঁধে কিভাবে আসে। ভালোমন্দ সব পরিসরে রয়েছে। কোন একজন ব্যক্তি বা পুলিশ অফিসার যদি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ভুলে বিপথে যায়। তার শাস্তি সে নিশ্চয় পাবে। এ সরকারের আমলে সহজে কেউ পার পেয়েছে বলে মনে হয় না। কিন্তু এরপরেও কিছু প্রশ্নের উত্তর অধরা থেকে যায়।
পত্র পত্রিকার সংবাদ থেকে তথ্য উপাত্ত পড়ে কিছু প্রশ্ন হয়তো সবার মনে উঁকি দেয়। যেমন- ৩১ জুলাই (অব:) মেজর সিনহা ও তার সহকর্মী রাতের বেলায় ইনানী পাহাড়ে না গিয়ে টেকনাফের গহীন জঙ্গলে কেন গেলেন? নিচে গাড়ি রেখে উপরে পাহাড়ে গেলেও গ্রামবাসীরা কেন ডাকাত বলে প্রচার করল, আবার পুলিশকে খবর দিলেন? মেজর সিনহা ও সিফাত যাওয়ার সময় কোন সড়ক দিয়ে গেলেন? একই চেকপোস্ট দিয়ে যদি সেখানে যান তাহলে আসার সময় তো চেকপোস্টে সমস্যা হওয়ার কথা না? পাশাপাশি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা মেজর একটি ক্রিটিক্যাল জায়গায় ১মাস যাবত শুটিং করলেও স্থানীয় পুলিশকে অবগত করার প্রয়োজন ছিল কিনা? কারা ওসি প্রদীপ ও এসপির অডিও রেকর্ড ফাঁস করলেন? কারা ডিজিএফআইয়ের গোপন তথ্য ফাঁস করলেন? কেন করলেন? সেটা কি পুলিশ বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না অন্য কিছু? ওসি প্রদীপ যদি টেকনাফে ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে তাহলে বিগত ২ বছরে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতিবেদন কি ছিলো? তারা কি বিগত ২ বছর কোন প্রতিবেদন পাঠান নি? এখন কেন এত্ত অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে? এর আগেও তো র্যাবের বন্দুকযুদ্ধে একরাম কমিশনার নিহত হয়েছিলেন? জীবন্ত অডিও রেকর্ড এখনো স্যোশাল মিডিয়ায় ভাসছে? সে হত্যাকাণ্ডের কি বিচার হলো? টেকনাফে ইয়াবা বন্ধের দায়িত্ব কি শুধুই পুলিশের? যদি না হয় তাহলে সীমান্তে পাহারায় বিজিবি, পানিতে কোস্টগার্ড ও স্থলে র্যাবের ভূমিকা টেকনাফে কতটুকু? এসব প্রশ্নের নানা উত্তরও খুঁজে জনগণ। উত্তরে যাই আসুক তবে তদন্ত পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি। রাষ্ট্রে বসবাস করলে রাষ্ট্রের আইন মানতে হয়। সে জন্য স্বেচ্ছায় পুলিশের ওসি ও আইনকে মান্য করে আত্মসমর্পণ করেন।
সব কিছুর পরেও কিছু পুলিশ অফিসার তার সৎ সাহসকে পুঁজি করে জনগণের শান্তির জন্য দিনরাত এক করে সন্ত্রাস ও অপরাধ দমনে কার্যকর ভুমিকা রাখে। বাংলাদেশ পুলিশের এমন কিছু অফিসার রয়েছে, যাদের উপর পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের ভরসা রয়েছে।
তেমনি এক পুলিশ অফিসার ছিল কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন। এরা মানুষের শেষ ভরসা। এদের কারণে জনগণ বুঝতে সক্ষম হয় পুলিশ জনগণের বন্ধু। এটাই প্রমাণিত হয় এদের কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা, ভালোবাসায় সাধারণ মানুষ আস্থা রাখে পুলিশে।
পুলিশ শুধু পুলিশ নন, একজন সৎ মানুষও বটে। তবে সব পুলিশ নূরের তৈরি ফেরেস্তা নয়, আগুনের তৈরি শয়তানও নয়। মাটির তৈরী রক্তমাংশে গড়া মানুষ। যাদের মানুষের মতই ভুল থাকবে, ভালো মন্দ থাকবে, দোষ-ত্রুটি থাকবে আবার সততাও থাকবে। ফেরেস্তাদের কাছে আমরা ভুল আশা করি না যেমন, তেমনি আবার শয়তানের কাছেও আমরা ভালো কিছু আশা করি না। এটাই সত্য, ভুল আর ভালো মিলেমিশে মানুষ। আমরা এক ওসির ভুল পথে যাওয়া অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারি না। দোষ দিতে পারি না সব পুলিশ কে।
কিছু সৎ পুলিশ অফিসারের কারণেই বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেটা অস্বীকার করার কিছু নেই। জগত বড় নিষ্ঠুর। এক পুলিশের দোষে রাতে টকশো ভারি হয়। বলতে পারেন দেশের কোন বিভাগে ঘুষ চলে না, দুর্নীতি হচ্ছে না?
বর্তমান পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ র্যাবে থাকতে একটি কথা বলেছিলেন, পুলিশ কোন গ্রহের অধিবাসী নয়, তাঁরা এ সমাজেরই অংশ। সমাজের শতভাগ মানুষ যেদিন সৎ হবে ,কেবল সেদিনই শতভাগ সৎ পুলিশ পাওয়া যাবে।’
‘আমাদের স্বপ্নের পুলিশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন- রাজনীতিবিদ ভালো হলেই দেশ ভালো হয়ে যাবে, পুলিশও ভালো হবে। সুতরাং স্বপ্নের পুলিশ পেতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সৎ ও ভালো মানুষ এবং যোগ্য অফিসার।
প্রসঙ্গত, বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জের দক্ষিণ ওলানিয়া ইউনিয়নের কৃতি সন্তান পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন ২৪ তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন মেধাবী ও চৌকস পুলিশ অফিসার। পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (টিআর) পদে দায়িত্বপালনকালীন সময়ে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এ.বি.এম মাসুদ হোসেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করেন।
লেখক: ক্ষুদে গণমাধ্যমকর্মী ও অনলাইন এক্টিভিটিস
চট্টগ্রাম। মতামতের জন্য সম্পাদক নয়, লেখকের দায়ি।