November 22, 2024 - 10:04 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeনির্বাচিত কলামএখনই ভাবতে হবে ঔষধের দাম যেন পেঁয়াজের মতো না হয়!

এখনই ভাবতে হবে ঔষধের দাম যেন পেঁয়াজের মতো না হয়!

spot_img
মুহাম্মদ সেলিম হক: একলাফে এক টাকার নাপা ট্যাবলেট ৫০ টাকা। এক পাতার দাম ৫০০টাকা! চোখ কপালে উঠার কথা। একটি স্বাধীন দেশে এটা কি করে সম্ভব। হুজুগে বাঙালির দেশে মোটেও অসম্ভব কিছু  না। এটা কেবল একটা উদাহরণ। জ্বরের সাথে করোনা রোগের মিল নিরানব্বই ভাগ সাদৃশ্য। তাই এ রোগে আরগ্য হতে সব ঔষধের দাম বাড়ছে। ঘরে ঘরে মৌসুমি জ্বরের প্রার্দুভাব চলছে।

অনেকে আগে ভাগে ঔষধ মজুদে মাঠে নেমেছে। এ সুযোগটা নিলো ফার্মেসী মালিক ঔষধ ব্যবসায়িরা। তবে একেবারে ফেলে দিবার মতো খবর নয়। করোনার উপসর্গ ও লক্ষণে যে সব ঔষধ খেলে ভালো হয় সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় আসায় তার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। যার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযানে নামতে হল। ফার্মেসীওয়ালা ও দোকানদারদের জরিমানার আওতায় আনা হল।

পাঠকের নিশ্চয় মনে আছে সেই পেঁয়াজের দাম বাড়ার গল্পের কথা। কয়েক মাস আগে এক লাফে ৩০ টাকার পেঁয়াজ ২৫০ টাকাতে গিয়ে ঠেকল। ভারতের এক ঘোষণায় কাঁপুনি শুরু হয় দেশের বাজারে। সরকারের প্রস্তুতি না থাকাতে অসাধু বণিকরা লুটে নেয় হাজার কোটি টাকা লভ্যাংশ। নাকানি -চুবানি খায় দেশের সাধারণ মানুষ। সরকারকে ছুটতে হয় একবার চীনে আরেকবার মিশর পাকিস্তান ও মিয়ানমারের দিকে।

আজকের করোনা পরিস্থিতির মতো সেদিন টেলিভিশন আর পত্রিকার পাতায় মোটা দাগের বড় নিউজে ভরপুর ছিল পেঁয়াজের সংবাদ। পেঁয়াজ না খেতে কত আবদার। কত ফাঁন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। একটি পেয়াজ ঝুঁলিয়ে স্বাদ নেয়ার প্রতিযোগিতা এখনো চোখে ভাসে। এরই ফাঁকে হালকা লবণের গুজব চলে। কেনাবেচাও খারাপ হয়নি অল্পসময়ে হুজুগী মানুষের।
 
সরকারের কেবল প্রস্তুতি আর সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এ জাতিকে কয়েকমাস পেঁয়াজের ঝাঁজে অস্থির থাকতে হয়। সেই পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজার ভ্যানগাড়িতে ৩০ টাকা। এখন তার পিছনে ক্যামেরা নেই, দাম ও নেই। করোনার শুরুতে এ ধাক্কা লাগে রাঁধুনী খাদ্যশস্য আদা’র গায়ে। হঠাৎ ১৫০ টাকার আদা ৩৫০ টাকা গিয়ে ঠেকে। রাতারাতি কয়েকজন ব্যবসায়ী মুনাফা করে কয়ে ‘শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপর আবারো অভিযান, ধরপাকড় শুরু হলে বাজার স্থিতিশীল। কেন জানি মনে হয় পৃথিবীর কোন দেশেই নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য বাজারে এ রকম পরিস্থিতি হয় না। বাজারে একটি মাত্র পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে পুরো দেশ অস্থির মনে হয় শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব!

করোনার জন্য আজ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন ঔষধ বের হয়নি। কেবল ধারণা করে পরীক্ষামুলক রোগীকে দেয়া হয় কিছু ঔষধ। এতে কেউ কেউ দ্রুত সুস্থ হয়। কেউ ধীরে হয়। ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ প্রয়োগ করে করোনা রোগীকে সুস্থ্য করা হয়। তবে যে দেশে করোনা উৎপত্তি সেই চীন দেশে কোন ধরনের ঔষধ বা ইনজেকশন নেওয়া হয়নি। বেশির ভাগই ভালো হয়েছে ঘরোয়া পদ্ধতি। তবে দেশে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী তাদের সুস্থ্যতার হার বেশি।

শুরুতে ফেইক বলা হলেও বেশীর ভাগ করোনা রোগী কবিরাজী টাইপের চিকিৎসায় দারুন ফল পান। তা হলো-গরম পানির ভাব। গরম রং চা দিনে ৩ বার আদা দিয়ে। কালো জিরা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া। গরম পানি দিয়ে  গলগলা/কুলি করা আর হালকা ব্যায়ামে নাকি করোনা কাবু হয়েছে। পরে আধুনিক ডাক্তারেরাও এ চিকিৎসায় সম্মতি দেয়। ৩০ টাকার ঔষধে করোনা ভালো হয় ৪দিনে এরকম সংবাদ আসার পর বাজার থেকে সেই উকুন মারা ও স্ক্যাবো নামে দুটো ঔষধ বাজার থেকে উধাও। আমি নিজেও লোকাল একটি ফার্মেসীতে এটার জন্য গেলাম। দোকানদার জানালো এটা বাজারের সংকট। ৩০ টাকার পাতার ঔষধ  ‘শত টাকা।

এবার আসল কথায় ফেরা, করোনা ছাড়াও জ্বর এখন সবার ঘরে। তাই ঔষধের চাহিদা বাড়বে। এছাড়া করোনার জন্য এখন কেবল আগের সেই জ্বর, সর্দি আর গলাব্যথার সেই ঔষধ কাজ করছে। যে অবস্থা চলছে সামনে যদি এক কোটির কাছাকাছি লোক জ্বরে আক্রান্ত  হন। তাহলে ঔষধের সংকট হবে তীব্র। সরকারকে ঔষধ উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। দেশের সকল কোম্পানিকে নিয়ে বসতে হবে যাতে সরবরাহ ঠিক থাকে। বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনতে যাতে সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। দাম না বাড়ার জন্য বাজার মনিটরিং করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে এক্ষুনি ভাবতে হবে।

দেশে হঠাৎ ঔষধের সঙ্কট হলে বাহিরের দেশ থেকে ঔষধ আমদানি করতে হবে। কোন দেশ থেকে সহজে আনা যাবে তাও এখন  ঠিক করতে হবে। প্রয়োজনে খোজঁ খবর এখন থেকে শুরু করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা না রাখলে এদেশের ব্যবসায়ীরা গাছে উঠবে। কারণ এ রোগ ঘরেও সুস্থ্য হয়। ঠিক মতো ঔষধ পেলে কারো সমস্যা হবে না। ঔষধের যোগান সচল না থাকলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে চরম বিশৃঙ্খলা হবে।

এটা পেয়াজ নয় যে, কম খাওয়া যাবে। দেশের মানুষ এটা মানবে না। দেশের ক্রান্তিলগ্নে সুযোগ নিবে চরম ভালো মানুষগুলো । এসময়টা কাজে লাগাবে। মাঝখানে জনগণের চরম ভোগান্তি ঘটবে। করোনার শুরুতেই কিছু ভুল ছিলো। তার মাশুল আজকের ৬৩ হাজারেরও অধিক করোনা রোগী। সামনে হবে ঔষধের সংকট। এটা নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে এবং প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।

লেখক : সাংবাদিক ও সমসাময়িক কলামিষ্ট

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানি ২টি হলো-গ্লোবাল...

জেড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঢাকা স্টক...

পুঁজিবাজারের ২ কোম্পানির এজিএমের তারিখ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল লিমিটেড ও বিবিএস কেবলস পিএলসির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ পরিবর্তন করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ...

শরীয়াহ পরিপালনে ইউনিয়ন ব্যাংক বদ্ধপরিকর

কর্পোরেট ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকিং এমন এক ব্যাংক ব্যবস্থা যেখানে সকল লেনদেনে সুদ নিষিদ্ধ।ব্যাংকিং সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ইসলামী শরীয়ার আলোকে পরিচালিত হয়। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি....

সাউথইস্ট ব্যাংক, টাইনি টটস ও সামার ফিল্ড স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কর্পোরেট ডেস্ক : সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. টিউশন ফি কালেকশন সার্ভিস, পে-রোল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের হেড অফিসে টাইনি টটস ও...

বরগুনায় প্রান্তিক মানুষের মাঝে এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ

কর্পোরেট ডেস্ক : বরগুনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নিন্ম আয়ের প্রান্তিক মানুষদের মাঝে প্রকাশ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অর্থায়ন তহবিল কর্মসূচির আওতায়...