বেনাপোল প্রতিনিধি : যশোরের দক্ষিণ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ শার্শার বেলতলা আম বাজারে এক আম ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনা উঠেছে। চাঁদার টাকার জন্য তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাত ১০ টার সময় এই ঘটনাটি ঘটে বাজারে। একটি মহল প্রতিনিয়ত বাইরের ব্যবসায়ীদের উপর হুমকি-ধামকি দিয়ে নানা ভাবে চাঁদাবাজি করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে নুরুল হুদা নামে একজন আম ব্যবসায়ী শার্শার বেলতলা আম বাজারে প্রতি বছর আম কিনতে আসেন। তিনি এখান থেকে আম কিনে ঢাকাতে বিক্রি করেন। ঘটনার দিন রাত ১০টার সময় আম কিনে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠানোর উদ্দেশ্যে প্রস্তুুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় রফিকুল ও রাসেলসহ ৪ জন চাঁদাবাজ এসে এক হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তখন তিনি একটু পরে দেওয়ার কথা বললে, তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। তার বাম চোখের উপর ঘুষি মেরে গুরুতর জখম করা হয়েছে। মারধোরের পরপরই এই ব্যবসায়ীকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসা হয় চাঁদা আদায়কারীদের আস্তানায়। সেখানে তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়, যাতে তিনি মারধোরের কথা কাউকে না বলে।
বেলতলা আম ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি শাহজাহান কবির জানান, আম বাজারে একজন ব্যবসায়ীকে মারধোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমি এ খবর পেয়ে অনেক খুঁজাখুঁজির পর বেলতলা বাজারের এক পল্লী চিকিৎসকের দোকানের মধ্যে তাকে পাই। তখন সেখানে যারা মারধোর করেছে তার মধ্যে অন্যতম চাঁদা আদায়কারী মনিরুল ছিল। আমি মনিরুলকে কেন ব্যবসায়ীকে মারধোর করা হলো জিজ্ঞাসা করতেই সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এসময় বেলতলা আম বাজারে ডিউটিরত পুলিশ কর্মকর্তা এএস’আই আবু সাঈদ আমাদের পাশেই ছিলেন, কিন্তু তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, উল্টো আমাকেই আটক করে পুলিশের গাড়িতে উঠায়।
বেলতলা আম বাজারের একাধিক আড়তদাররা জানান, যেখানে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে বাজারে মাইকিং করে ঘোষণা দেয়া হয়েছে কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাজারে কোন রকম চাঁদা আদায় করা যাবে না, সেখানে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এছাড়াও তারা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আম ব্যবসায়ী নুরুল হুদা জানান, আমার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আমি এখানে ব্যবসা করতে এসেছি, কারও সাথে মারামারি করতে নয়। ওই দিন ঘটনার পাশেই পুলিশ ভাইয়েরা ছিলেন, তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালে বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে, আমার কাছে ঘটনার বিবরণ শুনে ডায়েরীতে লিখে নিয়ে চলে যান। তিনি আরো জানান, আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বাগআঁচড়া মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান কিনার কাছে আমের ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা মনিরুলের কাছে ৩ বছরের জন্য ৭ লাখ টাকায় নিলামে দিয়েছি। টাকা মনিরুল আদায় করে এবং তকে বলা আছে ছোট ট্রাক থেকে ৪০০ শ’ টাকা ও বড় ট্রাক থেকে ৫০০ টাকা নিবে। যদি অন্য কোন সংগঠন বা ব্যক্তি বেশি নেয় তাতে আমরা দায়ী নই।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম জানান, আম ব্যবসায়ীকে মারধোরের বিষয়টি আমি শুনেছি কিন্তু কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে সহকারি পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান জানান, সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা নেওয়ার কোন আইন নেই। যদি কেউ চাঁদাবাজি করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।