বেনাপোল প্রতিনিধি : বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে আবারও উদ্ধার হলো প্রায় ৭ কেজি সোনার বার। আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী রয়েল মৈত্রীবাস সার্ভিস এর ইঞ্জিনের ভেতর লুকিয়ে সোনার এ চালান নিয়ে যাচ্ছিলেন পাচারকারী ও বাস সার্ভিসের চালক মোস্তফা ও হেলপার মতিউর রহমান আকন্দ।
এ সময় সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইসিপি পেট্রাপোল ১৪৫ ব্যাটালিয়নের বিএসএফের সদস্যরা চালক এবং হেলপারকে আটক করে।
সোমবার (৮ মে) দুপুরে বিএসএফ সদস্যরা গোপন তথ্য পায় বাংলাদেশ-ভারত সরাসরি চলাচলকারী আন্তর্জাতিক বাস পরিষেবা রয়েল মৈত্রীবাসে (টিআরটিসি-৪১২- টিআরওজি-১১৭১) বিপুল পরিমাণ সোনার চালান বাংলাদেশ থেকে পাচার করে ভারতে আনা হচ্ছে। বাসটি বেনাপোল কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করে নোম্যান্স ল্যান্ড পার হয়ে ভারত অংশে পেট্রাপোল চেকপোস্টে পৌছানের সাথে সাথে পেট্রাপোল বিএসএফ সদস্যরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। পরে তল্লাশি করে ইঞ্জিন কভারে লুকায়িত অবস্থায় ৬ কেজি ৯৫০ ওজনের ৫১ পিস সোনার বার উদ্ধার করেন। যার মূল্য ভারতীয় মূল্য ৪ কোটি ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮২ রূপি।
বিজিবি‘র বেনাপোল চেকপোস্ট আইসিপি ক্যাম্পের কমান্ডার মাহবুবুর রহমান জানান, শুনেছি ভারতের ওপারে একটি বাস তল্লাশি করে সোনা উদ্ধার করেছে বিএসএফ। এর বেশি কিছু জানতে পারিনি তিনি।
এদিকে সোনা আটকের পরপরই বেনাপোল চেকপোস্টের রয়েল মৈত্রী পরিবহন কাউন্টারের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, এ সোনার চালানের মূল মালিক ভারতের আন্তর্জাতিক সোনাপাচারকারী সিন্ডিকেটের প্রধান আজগার আলীর। ঢাকার একটি পাচারকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সোনার বার বিভিন্ন মাধ্যমে ভারতে পাচার করে নিয়ে যায়। যার মধ্যে অধিকাংশ চালান আসে বেনাপোলের সোনাপাচারকারী সোহাগ, কামাল, জামাল সিন্ডিকেটের কাছে। মেম্বার সিন্ডিকেটের মাধ্যমেও বাবুর ঘাট দিয়ে প্রতিদিন পাচার হয় বিপুল পরিমাণ সোনার চালান।
অভিযোগ রয়েছে, সোহাগ, কামাল, জামাল সিন্ডিকেটের সাথে রয়েল মৈত্রী পরিবহনের বেনাপোল চেকপোস্টে কাউন্টারের ম্যানেজার মুকুলের রয়েছে সখ্যতা। তার মাধ্যমে ইপরিবহনে করে বিপুল পরিমাণ সোনা ভারতে পাচার করা হয়।জনশ্রুতি রয়েছে, এ চালানে সোনা ছিল ২০ কেজি। কিন্তুু পেট্রাপোল বিএসএফের হাতে আটক হয়েছে মাত্র ৭ কেজি সোনা। ৭ কেজি সোনা রয়েল মৈত্রী পরিবহনের ইঞ্ছিন কভারের মধ্যে সেট করে দিয়ে বাকী সোনা সরিয়ে ফেলে সোহাগ, কামাল, জামাল সিন্ডিকেট। নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে ও ইসিন্ডিকেট বিএসএফকে সোনা পাচারের তথ্য জানিয়ে দেয়। যাতে বলা যাবে সব সোনা বিএসএফ আটক করেছে। কার্যত এভাবেই সোনাবহনকারীরা কোটিপতি বনে যাচ্ছে।
ঢাকা-কলকাতা, আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা রুটে সরাসরি চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলোর বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা ও কলকাতার চোরাচালানীরা। বাসগুলো সরাসরি চলাচল করায় বর্তমানে সোনাপাচারকারীদের নিরাপদ বাহনে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এসব বাসে করে বিপুল পরিমাণ সোনার বারসহ বিভিন্ন পণ্য পাচার করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি বাস সার্ভিসের স্টাফরা সোনার বার পাচার করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুই সীমান্তে চুক্তির মাধ্যমে চলছে এ ব্যবসা। বাসের কেবিন. চালকের সিটের নীচসহ বিভিন্ন স্থানে আলাদা বক্স বানিয়ে বড় বড় সোনার চালান পাচার করে থাকে।
উল্লেখ্য, গত চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ভারতে পেট্রাপোল চেকপোস্টে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া কলকাতাগামী এন আর ট্রাভেলস শ্যামলী বাস থেকে ৩০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে ভারতীয় বিএসএফ এর ডগ স্কোয়াড বাহিনী। যার বাজার মূল্য দুই কোটি রুপি বেশি। জব্দ করা হয় বাসটি। আটক করা হয় বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে। তল্লাশির সময় পালিয়ে যায় বাসের হেলপার।