অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডলার সংকটে পড়ে দেশ। সংকট কাটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো যাচ্ছে না। আমদানি বিল পরিশোধে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার সরবরাহ করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ নেমে আসছে ৩০.৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে ১ দশমিক ১২ বিলিয়নের বেশি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে। আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে আসে। ডলারের দাম নির্ধারণে দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। তবে সংকট কমার পরিবর্তে গত বছরের মার্চ থেকে সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এতে ডলারের মজুদ ব্যাপকহারে কমছে।
বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি দায় কমানোরসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপরেও ডলার সংকট কাটছে না। ডলার বিক্রয়সহ অন্য খাতে ব্যয় কমাতে না পারলে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বেই। এসব কারণে অর্থনীতিতে সংকট কাটছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
আকু সদস্য দেশের মধ্যে রয়েছে- ভারত, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। শ্রীলংকার অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় তারা আকু থেকে বেরিয়ে গেছে। সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর আমদানি বিল পরিশোধ করে থাকে। আকু বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ নামবে ২৯ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফ’র হিসাব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। তাহলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে।
এদিকে মঙ্গলবার (২ মে) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ বাংক। গত সপ্তাহে ডলারের দাম ছিল ১০৩ টাকা। আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ১০৬ টাকায় নির্ধারণ করতে পারে। রপ্তানি আয় ও রিমিট্যান্সের মধ্যে ব্যবধান দুই টাকায় নেমে আসতে পারে। যেটি আন্তর্জাতিক মানদন্ড হিসাবে বিবেচিত।
এতোদিন প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ছিল ১০৭ টাকা, আর রপ্তানি আয়ে ছিল ১০৫ টাকা। এখন থেকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে আবারও ডলারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবিবি ও বাফেদা।
নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে দাম পাবেন ১০৮ টাকা, যেটা আগে ছিল ১০৭ টাকা। একইভাবে রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পাবেন ১০৬ টাকা, যেটা এর আগে ১০৫ টাকা ছিল।