হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। এই মশার কামড়ে প্রতিদিনই শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
চলতি বছর রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। চলতি বছরে মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৬১ হাজার ৩৮ জন ভর্তি হলেও বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ছয় হাজার ৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে রাজধানীতে তিন হাজার ৪১১ জন ও ঢাকা বিভাগসহ অন্য বিভাগীয় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দুই হাজার ৬২৪ জন। শতকরা হিসাবে ৯০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৪৪৬ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর ৪১টি সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৬৮৯ ও বিভাগীয় হাসপাতালে ৭৫৭ জন ভর্তি হয়েছেন। আর সরকারি হিসাবে ৮০টি সম্ভাব্য ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু পর্যালোচনা করে মোট ৪৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত বুধবার থেকে শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন যথাক্রমে দুই হাজার ১৬১ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন যথাক্রমে দুই হাজার ১৬৩ জন। ওই তিন দিনে ঢাকার বাইরে দুই হাজার ৫০৮ নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর বিপরীতে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন দুই হাজার ৯৪১ জন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি, ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা, ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করাও দরকার। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতাও জরুরি।