December 7, 2025 - 1:17 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট-অর্থ ও বাণিজ্যঅর্থ-বাণিজ্যসূর্যমুখী চাষে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক শাহিন মিয়া

সূর্যমুখী চাষে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক শাহিন মিয়া

spot_img

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক মো. শাহিন মিয়া। ২৫ গন্ডা জমিতে তিনি সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের দিকে শোভা ছড়াচ্ছে। চারিদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছে সে এক অপরূপ দৃশ্য। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসু লোকজন সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত দেখতে আসছে। অনেকেই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।

জানা যায়, ঢাকার দোহা উপজেলার মো. খালেক এর ছেলে মো. শাহিন মিয়া (৪৯) আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে কর্ণফুলীতে আসেন। ইছানগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড। মালেক মাঝির বাড়িতে বসবাস করেন। বিয়ে করে তিন সন্তানের জনক তিনি। বড় মেয়ের বিবাহ হয়েছে। দুই ছেলে সন্তান স্কুলে পড়েন। পেশায় তিনি কৃষক। অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করেন। সরিষা, ধান, লাউ, বাংলা কদু, ধুন্দুল (তরই) সহ বিভিন্ন সবজি ও মাছ চাষ করেন। তাঁর খামারে রয়েছে ছাগলও।

কৃষক শাহিন মিয়া জানান, গত ২ মাস আগে তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সূর্যমুখী ও সরিষা বীজ সংগ্রহ করেছেন। চাষের জন্য পেয়েছেন সারও। অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে তিনি এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়।

একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ করা যায়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়। এই চিন্তা থেকে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেন তিনি।

শুরুটা কিভাবে হয়েছে জানতে চাইলে কৃষক বলেন ,‘আমি সবজি চাষ করি। কয়েক মাস আগে কর্ণফুলী উপজেলা কৃষি অফিসার আমাকে বললেন, “এবারে সরিষা ও সূর্যমুখী বীজ আসল। চাষ করব কিনা। তখন আমি বললাম করব।” প্রতি উত্তরে কৃষি অফিসার জানালেন ,“আপনি তো আগে কখনো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন নি। কিভাবে করবেন। আমি জানালাম চেষ্টা করলে অবশ্যই পারব। কারণ স্বপ্ন দেখতে সাহস লাগে।”

“তখন কৃষি অফিসারের সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রথমে কিছু জায়গায় সরিষা চাষ শুরু করি। কম লাভবান হই। পরে ২৫ গন্ডা জমি জুড়ে বেগুন ও মরিচের চারা রোপন করার মতো সূর্যমুখী বীজ রোপন করি। উপজেলা থেকে আমাকে ১০ হাজার পিস বীজ দিলেও আমি প্রথমে ৮ হাজার মতো বীজ রোপন করি। একই সময়ে উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও বীজ নিয়েছেন। কিন্তু অবহেলা করে কেউ চাষ করেননি। আমি সাহস করে চাষ করেছি। কারণ আমার জমিদার খুব ভালো। তাঁর জমিজামা আমি দেখাশোনা করি। কোন টাকা পয়সা দিতে হয় না।”

ওই কৃষক আরও বললেন, ‘কৃষি অফিসার ওষুধ দিয়েছেন। ক্ষেতে তা ছিঁটানো হচ্ছে। সূর্যমুখী বীজ রোপন করেছি প্রায় ৬০ দিন মতো হল। আরও ৩০ দিন সময় লাগবে বীজ পেকে ঘরে তুলতে। এ চাষটি করতে ২ জন শ্রমিকসহ আমার ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’

পরিপক্ক বীজ গুলো কৃষক শাহিন মিয়া কোথায় বিক্রি করবেন বা কোন পরিকল্পনা আগে থেকে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিসার সাহেব জানালেন সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল বানানো হয়। এছাড়াও অনেকেই বলেছেন, ‘এর বীজ হাঁস মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং ভালো দামে বিক্রি করা যাবে।’

কর্ণফুলীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিক বড়ুয়া বলেন, ‘সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে সাত থেকে সাড়ে সাত মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। বিঘা প্রতি কৃষকরা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবে। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে।’

ওই কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ‘সূর্যমুখী একধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) হয়ে থাকে, ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর নামকরণ হয় সূর্যমুখী।’

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সূর্যমুখী বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয় ৷ তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। সমুদ্র কুলবর্তী এলাকায় শীতকালীন শস্য হিসেবে চাষ করা হয় ।’

এমনকি ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে। এছাড়াও সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল হতে ভাল এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

‘শিগগির দেশে ফিরবেন তারেক রহমান, তার নেতৃত্বেই নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেকোনো সময় দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন,...

বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা এখন খালেদা জিয়ার নেই: ডা. জাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন বিদেশ যাওয়ার মতো না। তাই তার বিদেশ যাওয়া কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তাকে এখনই যুক্তরাজ্যে নেওয়া যাচ্ছে...

বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ ৭ দিন পর হস্তান্তর

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুর ৫৮ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর অধীন জীবননগর উপজেলার মাধবখালী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে নিহত যুবক শহিদুল ইসলাম শহীদের...

শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন কি না তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লিতে থাকা এবং ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।...

যশোর বোর্ডে শতভাগ ফেল ২০ কলেজকে শোকজ

মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ ফেল করা ২০ কলেজকে শোকজ করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের...

সিরাজগঞ্জে ৪৩ কেজি গাঁজাসহ আটক ৩

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের অভিযানে ৪৩ কেজি গাঁজা ও একটি পিকআপভ্যানসহ তিন মাদক কারবারি আটক হয়েছে। শনিবার ভোরে কড্ডার মোড় এলাকায় গোপন...

প্রতিবেশীর ইঁদুর মারার বৈদ্যুতিক ফাঁদে প্রবাসীর মৃত্যু

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বীজতলায় প্রতিবেশীর ইঁদুর মারার ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো.নুরুল হুদা (৫১) নামে এক কাতার প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার...