কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : পুলিশ খুনের মামলার আসামি আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে যেসব তারকা দুবাই গিয়েছিলেন তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ডিবি প্রধান বলেন, আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক মামুন। তাকে শুধু হত্যাই করেনি, মরদেহ যেন না পাওয়া যায় তাই কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার পর মামলা হয়। ডিবি তদন্ত করেছে। আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও নকল একজন আসামি জেলখানায় দেন। পরবর্তী সময়ে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। এরমধ্যে মূল আসামি দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যান।
তিনি বলেন, সোনার দোকানের মালিক আরাভ খান পুলিশ খুনের আসামি। বিষয়টি জানানো হয়েছিল সাকিবকে। কিন্তু তিনি দুবাইয়ে কেন গেলেন! এটি দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম একজন খুনি। একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করেছেন। মিডিয়াতে ও অনেকের বলার পরও সাকিবসহ অন্য তারকারা খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাইয়ে গিয়েছেন। তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে যোগ দিয়েছেন।
আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে ইন্টারপোলের সহায়তায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো, যোগ করেন ডিবিপ্রধান।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে আরাভ জুয়েলারি শপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুবাই যান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এছাড়াও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, গায়ক নোবেল, রুবেল খন্দকার, বেলাল খান, জাহেদ পারভেজ পাভেল ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের মতো অনেকে সেখানে যান। কিন্তু তারা জানেন কি-না, আরাভ জুয়েলারি শপের মালিক কে? কী তার পরিচয়?
আরাভ খান মূলত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি তিনি। ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে মামুন এমরান খানকে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে গাজীপুরে একটি জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়। ওই ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ। ওই সময় থেকেই তিনি পলাতক। পরে জানা যায়, যোগসাজশের মাধ্যমে প্রকৃত আসামি রবিউলের পরিবর্তে জেলে গেছেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আবু ইউসুফ লিমন। পরে সত্য প্রকাশ করে দেন তিনি। আদালত বিষয়টি অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে।
রবিউল ভারতে গিয়ে বিয়ে এবং সে দেশের নাগরিকত্ব নেন আরাভ খান নামে। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি ভিসা পান তিনি। আরাভ খান প্রবাসীদের কাছে নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দেন।
খুনের মামলার ফেরারি আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে আরাভের দুবাইয়ে জুয়েলারি ব্যবসার বিষয়টি নজরে এসেছে গোয়েন্দা পুলিশের। ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে তাকে গ্রেফতারে সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে জানায় ডিবি।
ঢাকা মহানগর গোয়ান্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ জানান, হত্যা মামলার সাজা থেকে বাঁচতে আবু ইউসুফ লিমন নামে এক তরুণকে বিকেএসপিতে খেলার সুযোগের প্রলোভন দেখান আরাভ। ওই প্রলোভনে লিমন আদালতে আরাভের বদলে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত লিমনকে কারাগারে পাঠান। এই ফাঁকে আরাভ ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তার সহায়তায় নকল পাসপোর্ট বানিয়ে দেশত্যাগ করে দুবাইয়ে চলে যান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে লিমনকে আদালত খালাস দেন।
ভারতীয় পাসপোর্ট অনুযায়ী আরাভ খানের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩১ জুলাই। ৩০ বছর বয়সি আরাভ খান দুবাইয়ে হাজার কোটি টাকা মূল্যের জুয়েলারি শপ খুলে সেখানকার ব্যবসায়ীদেরও চমকে দিয়েছেন।