November 22, 2024 - 11:36 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসম্পাদকীয়আইসিটি আইনের অপব্যবহার হবে না, নিশ্চয়তা দিবে কে?

আইসিটি আইনের অপব্যবহার হবে না, নিশ্চয়তা দিবে কে?

spot_img

২০১৩ সালে আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা যুক্ত হওয়ার পর গত কয়েকবছর ধরে এই আইনে নাগরিকদের গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ তুলে ধারাটি বাতিলের অভিযোগ করে আসছেন গণমাধ্যম কর্মীরা।তাঁদের দাবির মুখে সে সময় সরকার ধারাটি বাতিল করে সাইবার অপরাধ দমনে নতুন একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের কথা বলেছিল। কিন্তু গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাসের পর দেখা যাচ্ছে সেখানে ৪টি ধারায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিতর্কিত ৫৭ ধারাটিকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এমনকি নতুন এই আইনে জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার আরও বেশি খর্ব হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক সমাজ।

বাংলাদেশে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন ‘এডিটরস কাউন্সিল’ এর সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম মনে করেন, এই আইনের ফলে গণমাধ্যম-কর্মীদের কাজের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাবে।বাংলাদেশে ২০১৩ সালে আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা যুক্ত হওয়ার পর গত কয়েকবছর ধরে এই আইনে নাগরিকদের গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ তুলে ধারাটি বাতিলের অভিযোগ করে আসছিলেন গণমাধ্যম ও মানবাধিকার-কর্মীরা।

তিনি বলছিলেন, আইনের ৩২ ধারায় বলা আছে ডিজিটাল মাধ্যমে সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গ করা হলে ১৪ বছরের সাজা। এখন সরকারি গোপনীয়তা কী? যে কোন জিনিষ যেটা সরকার অফিসিয়ালি জনগণকে জানাচ্ছে না, সেটাই তো সিক্রেট থেকে যাচ্ছে। এই আইন অনুযায়ী সেটা তো জনগণের জানার অধিকার নেই। কারণ সরকার সেটা জানাচ্ছে না। কিন্তু সাংবাদিকদের তো সেটা জানানোর জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ। এটা তো স্টেট সিক্রেট হওয়ার ফলে আমি তো আর এখানে সাংবাদিকতা করতে পারবো না।

তার মতে, পরোয়ানা ছাড়াই আইনের ৪৩ ধারায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তাতেও চাপের মুখে পড়বেন গণমাধ্যম-কর্মীরা।

৪৩ ধারা অনুযায়ী, কোন পুলিশ অফিসার যদি আমার মিডিয়া অফিসে এসে তল্লাশি করেন এবং মনে করেন যে তদন্তের স্বার্থে আমার অফিসিয়াল সার্ভারে তার ঢোকা দরকার এবং তিনি যদি সার্ভার জব্দ করেন, তাহলে অপরাধের আলামত থাকুক আর না থাকুক সার্ভার জব্দ হওয়ায় আমার ঐদিনের প্রকাশনা তো বন্ধ রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘এটা কয়েকদিনও বন্ধ থাকতে পারে। এমনকি সরকার কোন খবরের কাগজ বন্ধ করার আদেশ না দিয়েও কাগজটা বন্ধ করে দিতে পারেন শুধু সার্ভারটা যদি উনারা কব্জা করে নেন।

মানবাধিকার আন্দোলনের নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৩ ধারায় বলা আছে আইনের ১৪টি ধারা থাকবে অ-জামিনযোগ্য। এক্ষেত্রে মানবাধিকার ঝুঁকির মুখে পড়বে। 

তিনি বলছিলেন, আইনে ১৪ টি ধারা অ-জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এসব ধারায় কাউকে গ্রেফতার করলে তার আর জামিন হবে না। এবং তার অপরাধ প্রমাণ হতে হতে হয়তো বেশ কিছুদিন চলে যাবে। ততদিন তাকে গ্রেফতার থাকতে হবে। শুধু সন্দেহের উপরে যখন তখন যে বাহিনীর যেটা কাজ না তাকে দিয়ে এরকম কাজ করা যায় না।

গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার কর্মীদের আরেকটা বড় উদ্বেগ আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ফলে যেটা বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু বাতিল হওয়া ৫৭ ধারাটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তারা।

আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বাতিল হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নতুন রূপে তা ফিরে আসছে বলে অভিযোগ গণমাধ্যমকর্মীদের।

নতুন আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারো মানহানি কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো বিষয়গুলোকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলোর শাস্তি ক্ষেত্র বিশেষে তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড।

কিন্তু সুলতানা কামাল মনে করেন, এই ধারাগুলোতে অপরাধগুলো সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না হওয়ায় এসবের অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। তবে দেশে সাইবার অপরাধ দমনে যে সুস্পষ্ট আইন থাকা দরকার সে বিষয়ে অবশ্য ভিন্নমত নেই কারো।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, সাইবার অপরাধীদের জন্য আইন থাকবে। এতে আমরা আপত্তি তুলতে পারি না। কিন্তু এ আইনে যখন গণমাধ্যমকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তখন তো সাংবাদিকরা জেল-জরিমানার খড়গ নিয়ে কাজ করতে পারবেন না।

মাহফুজ আনাম বলেন, আইনটি সংসদে তোলার আগে এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সঙ্গে সম্পাদকদের যে বৈঠক হয়েছিলো সেখানে তারা সাইবার অপরাধ ও গণমাধ্যমকে একাকার না করার জন্য কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন।

কমিটিতে আমাদের মূল বক্তব্য ছিল যে, আপনারা এই ধারাতে একটা প্রভিশন আনেন যে এই আইন গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যদি সেটা করতে না পারেন তাহলে এমনটা করেন যে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে যখনি এ আইনের কোন প্রয়োগ আসবে সেটা যেন প্রেস কাউন্সিল হয়ে আসে। কিন্তু এগুলো মানা হয়নি

তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ দিচ্ছেন ভিন্ন যুক্তি। ‘উনারা অনেক প্রস্তাবই দিয়েছিলেন, আমরা সেগুলো বিবেচনা করে দেখেছি। ডিজিটাল মাধ্যমে যখন কোন একটা অপরাধ হয়, সেখানে তো তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে সেটা দমন করা যাবে না। আমরা তো প্রেস কাউন্সিলের জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। এখানে আসল কথা হচ্ছে সবাই যদি সতর্ক থাকেন, বেআইনি কিছু না করেন, তাহলে তো কারো বিরুদ্ধে কিছু হবে না।’ এই আইনে অযথা কারো হয়রানি হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর যে অপব্যবহার হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

আরো পড়ুন: বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্র

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানি ২টি হলো-গ্লোবাল...

জেড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঢাকা স্টক...

পুঁজিবাজারের ২ কোম্পানির এজিএমের তারিখ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল লিমিটেড ও বিবিএস কেবলস পিএলসির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ পরিবর্তন করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ...

শরীয়াহ পরিপালনে ইউনিয়ন ব্যাংক বদ্ধপরিকর

কর্পোরেট ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকিং এমন এক ব্যাংক ব্যবস্থা যেখানে সকল লেনদেনে সুদ নিষিদ্ধ।ব্যাংকিং সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ইসলামী শরীয়ার আলোকে পরিচালিত হয়। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি....

সাউথইস্ট ব্যাংক, টাইনি টটস ও সামার ফিল্ড স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কর্পোরেট ডেস্ক : সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. টিউশন ফি কালেকশন সার্ভিস, পে-রোল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের হেড অফিসে টাইনি টটস ও...

বরগুনায় প্রান্তিক মানুষের মাঝে এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ

কর্পোরেট ডেস্ক : বরগুনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নিন্ম আয়ের প্রান্তিক মানুষদের মাঝে প্রকাশ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অর্থায়ন তহবিল কর্মসূচির আওতায়...