২০১৪ সালের নির্বাচন, নির্বাচনপূব সহিংসতার কথা এদেশের মানুষ এখনো ভুলে যায়নি। সে সময় যে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তার কঠিন বাস্তবতার প্রত্যক্ষদর্শী এদেশের সর্ব সাধারণ।
আবারো সে রকম কোন সঙ্কট তৈরি হতে যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন এদেশের সাধারণ জনগণ। তাদের শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক ময়দানে পরস্পর বিরোধী কঠিন মনোভাব।
বিএনপি বলছে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে সরকার ও সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসাব সম্মেলনে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারেও সরকারের কিছু করণীয় নেই, সেখানে যা হবার তা আইনি প্রক্রিয়াতেই হবে। এছাড়া বিএনপির আলোচনার দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছেন, বাংলাদেশের জন্য দু:খজনক হলো এটা যে প্রতি পাঁচ বছর পরপর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগি ও নানা রকম সমস্যা দেখা যায়।
তার মতে, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো তখন পরপর কয়েকটা মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিলো। কিন্তু এরপর থেকে অবাধ মুক্ত নির্বাচন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এখন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির বক্তব্যও পরস্পরবিরোধী।
এ প্রসঙ্গে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরো বলেন, ২০১৪ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো করতে পারবেন কিন্তু তাতে রাজনৈতিক সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
বর্তমান রাজনীতি আমাদের দেশের দুটি বড় দলের ভেতরে পরস্পরের বিপরীতমুখী দাবি দাওয়ার মধ্যে আটকে পড়েছে। সচেতন মহল মনে করছেন, নির্বাচনে লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবি যৌক্তিক।
তবে আমরা বিশ্বাস করি, দেশের যে কোন সঙ্কট সমাধান হওয়ার একমাত্র পথ আলোচনা। আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে, জনগণ যাতে সুষ্ঠভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন এবং দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে, তারজন্য সুষ্ঠ পরিবেশ সরকারকেই তৈরি করতে হবে আর সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে বিরোধী দলকে।
আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, হয়তো সেটাই শেষ কথা নয়। “রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই” বলে যে প্রবাদ আছে, সেটির আলোকে পর্দার আড়ালে হলেও বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান হবে।
একটা বিষয় সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের মনে রাখতে হবে, এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষমতা চায় না, তাঁরা চায় নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে, প্রতিনিধি নির্বাচন করতে। এক্ষেত্রে তাঁদের দাবি, ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সেটা অবশ্যই করতে হবে বর্তমান সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে।