রোহিঙ্গা সংকটের শুরু ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট। তখন মিয়ানমার সরকারের মদদপুষ্ট সেনাবাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যার ভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আসতে থাকে। সেদিন নো ম্যানসল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরকার মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছিল। বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়ে মাত্র এক মাসের মধ্যেই পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা দিয়ে এদেশে প্রবেশ করে। বর্তমানে সে সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখনো প্রায় প্রতিদিনই আসছে রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা সংকট যে দ্রুততার সাথে বিস্তৃত হয়েছে সেটি সরকারকেও বিস্মিত করে তুলেছিল।সীমান্তে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হবে কিনা সেটি নিয়েও সরকারের মাঝে ছিল দোদুল্যমানতা।
রোহিঙ্গা সংকট শুরুর এক মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে সংকট সমাধানের জন্য পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন।একই সাথে সংকট সমাধানের জন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টাও করেন। কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করা হয় মিয়ানমারের উপর চাপ তৈরির। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের মনোভাবের কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। বরং অদ্যাবধি রোহিঙ্গাদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ হয়নি এবং বন্ধ হয়নি বাংলাদেশে ঢোকাও।
রোহিঙ্গা সংকট শুরুর তিন মাসের মধ্যে মিয়ানমারের সাথে প্রত্যাবাসন সমঝোতা করে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রত্যাবাসনের বিষয়ে গত নয় মাসে দৃশ্যত কোন অগ্রগতি হয়নি।
বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের অবস্থায় এটা পরিস্কার যে, তাঁরা সমঝোতা চুক্তি করেছিল শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের নিরাপদ রাখতে। এতে করে বাংলাদেশের কোন লাভ হয়নি এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাবার কোন সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তি করার ক্ষেত্রে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করলে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মিয়ানমার হয়তো এমন একটি সমঝোতা করতে বাধ্য হতো, যাতে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারতো।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দীর্ঘ আট বছর পর আলোচনা হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। সংকটের অবসান চেয়ে নিরাপত্তা পরিষদ একটি যৌথ বিবৃতিও দিয়েছে।ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের শীর্ষ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি দলসহ বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছেন। এতো কিছুর পরও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবার বিষয়ে মিয়ানমার যেভাবে টালবাহানা করছে তাতে দেশটির উপর বেশি আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়েছে বলে মনে হয়না।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যখন নানামুখী তৎপরতা চলছিল তখন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারত এবং চীন যেভাবে মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়েছে তাতে বিস্মিত হয়েছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ও চীনকে বাংলাদেশের পক্ষে আনা কূটনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও সরকার মনে করেন ভারত ও চীন এ সংকট সমাধানের জন্য কাজ করছে।
কূটনৈতিক তৎপরতা যেভাবেই চালানো হোক না কেন, নিকট ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সংকটের কোন সমাধান যে হচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মিয়ানমার সরকারের আচরণে।
আরো পড়ুন: