January 16, 2025 - 2:16 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট-অর্থ ও বাণিজ্যঅর্থ-বাণিজ্যরপ্তানি কম তাই পেঁয়াজ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন ভারতের কৃষকরা

রপ্তানি কম তাই পেঁয়াজ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন ভারতের কৃষকরা

spot_img

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা। বাড়তি ফলনের কারণে এ বছর পেঁয়াজের দাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। দাম এতটাই কমেছে যে, কৃষকরা প্রতি কেজি মাত্র দু-তিন রুপিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অবস্থায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে অনেকের ফসল।

মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার কৃষক কৃষ্ণ ডোংরে এবার সপরিবারে তার পেঁয়াজ চাষের জমিতে হোলিকা দহন ‘অনুষ্ঠান’ করেছিলেন। তার সেই ‘অনুষ্ঠান’-এর ছবিসহ খবর বেশ কিছু জাতীয় সংবাদপত্রে ছাপানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিল সেই ছবি।

এ সপ্তাহের শুরুর দিকে ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রঙের উৎসব হোলি। তার আগের দিন গত ৬ মার্চ পালিত হয় ‘হোলিকা দহন’। বাংলায় একে ন্যাড়াপোড়া বলেন অনেকে, ইংরেজিতে বনফায়ার।

একজন কৃষকের পারিবারিক ‘অনুষ্ঠান’ জাতীয় সংবাদপত্রে উঠে আসার কারণ হচ্ছে, তিনি মূলত খড়কুটার বদলে ‘হোলিকা দহন’ করেছেন নিজের ক্ষেতের প্রায় ১৫ হাজার কেজি পেঁয়াজ পুড়িয়ে।

কেজি দুই রুপি
পেঁয়াজ চাষি ডোংরে বলেন, ১৫ দিন আগে আমি নিজের রক্ত দিয়ে লেখা একটা আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি যেন এসে আমদের সঙ্গে যোগ দেন ওই দিন।

‘অনুষ্ঠান’-এর সময়ে তোলা ডোংরে ও তার পরিবারের অশ্রুসজল চোখের ছবিও ঠাঁই পেয়েছে খবরের কাগজে। ওটা তো আসলে অনুষ্ঠান ছিল না, সেটি ছিল কয়েক মাসের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল নিজের হাতেই নষ্ট করতে বাধ্য হওয়ার ব্যথা। ব্যাংক থেকে ধার নেওয়া টাকায় চাষ করেও উপযুক্ত দামে পৌঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন না ডোংরে। সুদসহ ব্যাংকের দেনা কীভাবে শোধ দেবেন, সে চিন্তায় ঘুম হারাম তার।

ডোংরে বলেন, পেঁয়াজের দামের যা অবস্থা, তাতে হয়তো আত্মহত্যাই করতে হতো। সেটি করতে পারলাম না। তাই হাতে গড়া ফসলই শেষ করে দিলাম।

ডোংরে পরিবারের মতো দশা মহারাষ্ট্রের আরও হাজার হাজার পেঁয়াজ চাষি পরিবারের।

কৃষক নামদেব ঠাকরে বলেন, ছোট ছেলেটা ১০ রুপি দামের একটা আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল, দিতে পারিনি। ১০ রুপির আইসক্রিম মানে তো পাঁচ কেজি পেঁয়াজের দাম!

এ বছর মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ফলন এত বেশি হয়েছে যে, কৃষকরা প্রতি কেজি মাত্র দুই বা তিন রুপি দর পাচ্ছিলেন দু’দিন আগেও। তাতে চাষের খরচ তো উঠছেই না, উল্টো আড়তে পৌঁছে দিতে গেলে লোকসানের বোঝা আরও বাড়বে। তাই ক্ষেতেই পেঁয়াজ নষ্ট করে ফেলছেন কৃষকরা।

ডোংরে যেমন পুড়িয়ে ফেলেছেন ক্ষেতের পেঁয়াজ, তেমনি ট্র্যাক্টর চালিয়ে ফসল নিজেই নষ্ট করে দিয়েছেন নাসিকের নাইপালা গ্রামের কৃষক রাজেন্দ্র বোঢ়গুঢ়ে।

তিনি বলেন, তিন একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। পেঁয়াজ মণ্ডিতে আড়ৎদারের কাছে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার রুপির মতো খরচ হয় প্রতি একরের ফসলে। এক একরে ১৫০ কুইন্টাল ফসল তো হয়, ভালো ফলন হলে ১৭০-৮০ কুইন্টালও হয়। সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এক একরের ফসল থেকে গড়ে আমি দাম পাচ্ছি ৫০ থেকে ৬০ হাজার রুপি, যা আমার খরচের অর্ধেক। তাহলে সেই ফসল আড়তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও বাড়তি খরচ করে লোকসানের বোঝা বাড়াবো নাকি আমি?

ভারতে একসময় মহারাষ্ট্রই ছিল পেঁয়াজ চাষের মূল কেন্দ্র। কিন্তু কয়েক বছর যাবৎ মধ্য প্রদেশ ও গুজরাটেও পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে। তার ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিরা।

কয়েকদিন আগে পর্যন্ত চাষিরা কুইন্টালপ্রতি (এক কুইন্টাল ১০০ কেজির সমান) ৩০০ বা ৪০০ রুপি দাম পেয়েছেন। হোলির পরে বৃহস্পতিবার থেকে আবার বাজার খোলার পরে দাম কিছুটা বেড়ে কুইন্টালপ্রতি প্রায় ৭০০ রুপি হয়েছে। কিন্তু তাতেও চাষিদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যাবে না।

পরদেশি নামক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের পেঁয়াজ বেশি যেতো উত্তর ও পূর্ব ভারতে। কিন্তু গুজরাট ও মধ্য প্রদেশ থেকে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজ পরিবহনের খরচ অনেকটাই কম লাগে দূরত্বের কারণে। তাই আমাদের থেকে কম দামে ওখানকার চাষিরা পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারছে।

তিনি বলেন, দুবাই হয়ে পাকিস্তানে যেতো আমাদের পেঁয়াজ, শ্রীলঙ্কাতেও রপ্তানি হতো। কিন্তু ওই দুই দেশের যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সেখানে আর পেঁয়াজ পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। আবার বাংলাদেশেও ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি কমে গেছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট দেবেন্দ্র শর্মা বলেন, এ বছর শুধু যে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিরা ফসলের দাম না পাওয়ায় তা নষ্ট করে দিচ্ছেন তা নয়। প্রায় সব রাজ্যেই কৃষকরা ফসল নষ্ট করছেন দাম না পাওয়ার কারণে।

তিনি বলেন, পাঞ্জাব থেকে পশ্চিমবঙ্গ– এই বিরাট অঞ্চলের আলু চাষিদের অবস্থা দেখুন। তারাও দাম না পেয়ে রাস্তায় আলু ফেলে দিচ্ছেন।

কয়েকদিন আগে ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা ঘুরে এসেছেন এই কৃষি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, সেখানে দেখলাম টমেটো চাষিরা ফসল নষ্ট করে ফেলছেন। মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিদের অবস্থা তো দেখছিই। আসলে সরকার থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারণকারী– সবাই বলে চলেছেন, ফলন বাড়াও। কিন্তু ফলন বৃদ্ধির পরে সেই ফসল কীভাবে বিক্রি করা হবে, তার কোনো নীতি নেই। স্বাভাবিকভাবেই দাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এটিকে আমি বলি, চাষের ক্ষেতে রক্তগঙ্গা বইছে।

কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছর বাজেটে মার্কেট ইন্টারভেনশান স্কিম বা এমআইএসে অর্থ বরাদ্দ করে। ওই অর্থ দিয়ে এধরনের পরিস্থিতিতে কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি দাম দিয়ে ফসল কিনে নেয় সরকার। গত বছর ওই খাতে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল দেড় হাজার কোটি রুপি। আর এ বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বরাদ্দ রেখেছেন নামমাত্র এক লাখ রুপি।

দেবেন্দ্র শর্মা বলেন, শুধু অর্থ বরাদ্দ বা ন্যাফেডকে দিয়ে আপৎকালীন ভিত্তিতে পেঁয়াজ কিনলে হবে না। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা– যার মধ্যে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ, আমদানি-রপ্তানি নীতি সবই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবেই সামাল দেওয়া যাবে ভারতের কৃষিক্ষেত্রকে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী আজ নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত: টিউলিপকে ইলন মাস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন। এবার টিউলিপ ইস্যুতে মুখ খুলেছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ...

ইউনিয়ন ব্যাংকে বিনিয়োগ আদায়ে জোর তৎপরতা

কর্পোরেট ডেস্ক: ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগ আদায়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে শাখা সমূহে বিভিন্ন দিক...

বাড়ছে না হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ভ্যাট

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : দেশের হোটলে ও রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে সরকার। ফলে রেস্তোরাঁয় নতুন করে আর ভ্যাট বাড়বে না।...

‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ এমন স্লোগান সম্বলিত পত্র ভাইরাল, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাকে বরখাস্ত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ' এমন স্লোগান লেখা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের...

২কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড ও গোল্ডেন সন লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে...

দেশে এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারী সানজিদা আক্তার (৩০) মারা গেছেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন...

এফডিসিতে ফ্লোর ভাড়া ও শুটিং খরচ কমেছে

বিনোদন ডেস্ক : সিনেমা সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) শুটিং করাটা ব্যয়বহুল, ফ্লোর ভাড়া থেকে শুরু করে ক্যামেরা,...

১২ বছর পর কারামুক্ত ডেসটিনির চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ এক যুগ বছর পর কারামুক্ত হলেন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে...