গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলন চলছে। নজিরবিহীন এই কারণে যে শিক্ষার্থীরা সাধারণত তাদের শিক্ষা সংক্রান্ত অথবা হলে আবাসন সংক্রান্ত অথবা রাজনৈতিক কোনো কারণে আন্দোলন করে থাকে, কিন্তু সেসব কোনো কারণ নয় এখন শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছে।
সাম্প্রতিক সময়ের বেশ ক’টি শিক্ষার্থী আন্দোলন হয়েছে অহিংস। কিন্তু এবারের আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছে। কারণ হচ্ছে পরিবহণ শ্রমিক নেতা ও নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান কিছু বেফাঁস মন্তব্য করেছেন। তার কারণে ছাত্ররা সংঘবদ্ধ হয়ে সহিংস হয়ে উঠেছে। সেই সহিংসতার ওপর পুলিশ মঙ্গলবার পাল্টা সহিংসতা চালালে ফের বুধবার ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমে আসে এবং সহিংস হয়ে ওঠে। আমরা সরকারকে বলবো, ছাত্রদের এই আন্দোলন দমন না করে কিভাবে নিরাপদ সড়ক সৃষ্টি করা যায় সেই চেষ্টা করুন।
দেশে বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কিছু আন্দোলন আছে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন সবচে’ বড়। কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পূর্ণ অহিংস হয়েছে। এরপর বাসের চাকা দিয়ে ২ শিক্ষার্থীকে খুন করা হলে ছাত্ররা আন্দোলনে নেমেছে। কোটা বিরোধীদের পুলিশ এবং ছাত্রলীগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, অপর দিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে নামা ছাত্রদের পুলিশের সহিংসতা দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
একটা নিরাপদ সড়ক দেয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দুর্ঘটনা ঘটে তাই বাংলাদেশেও দুর্ঘটনা ঘটবে এটা কোনো দায়িত্ববান লোকের কথা হতে পারে না। দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেলে দেশে আন্দোলন হয় না। কিন্তু যে দুর্ঘটনা রোধ করা যেত সেটা না করে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর গাড়ি তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের হত্যা এবং আহত করা বড় ধরনের অপরাধ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি যথার্থ কাজটাই করেছেন। নৌ পরিবহন মন্ত্রী তার বেফাঁস মন্ত্যব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত ছিল যেসব পুলিশ বারাবারি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়া। সেটা করা হলে ছাত্ররা ঠান্ডা হয়ে যেত। পুলিশ যা করছে তা প্রকাশ্যে করছে, সামাজিক মাধ্যমে এগুলো ভাইরাল হয়েছে। দেখে গা শিউরে ওঠে। মনে হয় এসব পুলিশের কোনো ছেলে মেয়ে নেই, এই পুলিশরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক নন এবং মানবিকতা বর্জিত ভিন্ন কোনো গোত্র।
প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করুন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে স্টিয়ারিং তুলে দিয়েছেন তাদেরও বিচার হওয়া উচিত। শ্রমিকরা এব্যাপারে পাল্টা আন্দোলন করলে সেটা দমন করা উচিত হবে। কোনো ভাবেই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা রাষ্ট্রের উচিত হবে না।
আরও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা স্বীকার করলেন ওবায়দুল কাদের
শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ না করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ