মো: মিজানুর রহমান, এফসিএস: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর ওয়েবসাইডে দেখা যায়, সেখানে ফাইন্যান্সিয়াল অডিট করার জন্য ৪০টি সিএ ফার্মের সমন্বয়ে একটি অডিটরস প্যানেল কাজ করছে। যারা দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ৩৫১টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করছে।
বিএসইসি তাদের সংশোধিত কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড ২০১৮ এর সেকশন ৯ (নয়) এ কর্পোরেট গভর্নেন্স সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে সকল প্র্যাকটিসিং প্রফেশনাল একাউন্ট্যান্ট ফার্মের জন্য সমান সুযোগ রেখেছে। এর ফলে কমপ্লাইন্স অডিট যাঁদের করার কথা তাঁরা সেভাবে সুযোগ পাচ্ছেন না।
অথচ চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস) প্রফেশনের ২৬ জন ফেলো সদস্য প্রফেশনালী প্র্যাকটিসিং ফার্ম পরিচালনা করছেন। যাদের সমন্বয়ে বিএসইসি খুব সহজেই কমপ্লাইন্স অডিটরস প্যানেল তৈরি করে কর্পোরেট গুডগভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগকে সফল করতে পারতেন। কিন্তু বিএসইসি কর্তৃপক্ষ তা করেননি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত কেম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল অডিটের জন্য যেমন ৪০টি ফার্মের সমন্বয়ে একটি অডিট প্যানেল গঠন করা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রেও ২৬ জন চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস) প্রফেশনাল সদস্যের ফার্মকেও প্যানেলভূক্ত কমপ্লাইন্স অডিটর এর তালিকা যদি বিএসইসি কর্তৃক চুড়ান্ত করে দেয়, তাহলে কর্পোরেট সেক্টর এ গুডগভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় এটি একটি মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, যে সকল প্রফেশনাল একাউন্টিং বা সিএ ফার্মসূমহকে দিয়ে বিএসইসি তালিকাভূক্ত কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল অডিট করানো অনুচিৎ বলে মনে করেন আবার তাদেরকে দিয়েই কমপ্লাইন্স অডিট করানোর জন্য নতুন নোটিফিকেশনে কিভাবে সুযোগ রাখা হয়েছে?
বিএসইসি যে সকল প্রফেশনাল একাউন্টিং বা সিএ ফার্মকে দিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সিয়াল অডিট করানো ঝুঁকিপুর্ণ বলে মনে করেন, সে সকল ফার্মকে দিয়েই কমপ্লাইন্স অডিট বা কর্পোরেট গভর্নেন্স অডিট করানোর বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখা দরকার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের।
পূর্বের ন্যায় আবারও সংশোধিত কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড ২০১৮ তে সব প্র্যাকটিসিং ও প্রফেশনাল একাউন্ট্যান্স ও চাটার্ড সেক্রেটারি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কমপ্লাইন্স অডিট এর ক্ষেত্রে সকল প্রফেশনের জন্য উন্মুক্ত না রেখে এক্ষেত্রেও একটি কমপ্লাইন্স অডিট প্যানেল তৈরি করা যেত যা বিএসইসি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতই হোক, এড়িয়ে গেছেন।
ইংল্যান্ড, ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, কেনিয়া সহ বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার চাটার্ড সেক্রেটারি প্রফেশনের জন্য আলাদা আইন ও প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে, যার নাম ইনস্টিটিউট অব চাটার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)। কর্পোরেট সেক্টর তথা পুঁজিবাজারে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চাটার্ড সেক্রেটারি আইন-২০১০ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ২০১০ সালের ১৬ই জুন পাশ হয়। এই ইনস্টিটিউট এর বর্তমান সদস্য সংখা প্রায় চার শতাধিক যাদের মধ্যে ২৬ জন সদস্যের প্র্যাকটিসিং ফার্ম আছে এবং শতাধিক চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস), চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট (সিএ) ও কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট (সিএমএ) সদস্য প্রাইভেট প্র্যাকটিসিং এর সাথে জড়িত। অর্থাৎ অনেক কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট (সিএমএ) এবং চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট (সিএ) প্রফেশনের সদস্যই আইসিএসবি বা চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস) প্রফেশন এর সদস্য যাদের প্র্যাকটিসিং ফার্ম আছে। জাতীয় সংসদের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস) প্র্যাকটিসিং প্রফেশনালদের কর্পোরেট গুডগভর্নেন্স নিয়ে কাজের ক্ষেত্রটা নির্দিষ্ট করে দিলে বর্তমান সরকারের কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ আরো বেশি সুফল বয়ে আনবে।
২৬ জন সিএস সদস্যের ফার্মের সাথে যে শতাধিক প্রফেশন চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট (সিএ), কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট (সিএমএ) ও চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস) জড়িত আছেন যাদের কেউ প্র্যাকটিসিং প্রফেশনাল একাউন্ট্যন্ট আবার কেউ প্র্যাকটিসিং প্রফেশনাল চাটার্ড সেক্রেটারি এবং কেই আবার কষ্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউনটেন্ট। এঁদের প্রত্যেকেরই অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।
বর্তমান সরকারের কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে মহৎ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আলাদা প্রফেশন এবং ইনস্টিটিউট (আইসিএসবি), শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রকারী কর্তৃপক্ষের ভূমিকার কারণে এর সফল বাস্তবায়ন আশঙ্কাজনকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ চাটার্ড সেক্রেটারি প্রফেশন তথা আইসিএসবি’র সদস্যদের প্র্যাকটিসিং চাটার্ড সেক্রেটারি হিসেবে কর্পোরেট গভর্নেন্স কমপ্লাইন্স সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রটি স্বল্প পরিসরে থেকে যাচ্ছে। বিএসইসি‘র কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড ২০১৮ এর সেকশন ৯ (নয়) এ সাব সেকশন ১ (এক) এ সার্টিফিকেশনের বিষয়টি সংশোধন হওয়া দরকার।
শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সিয়াল অডিট, কর্পোরেট কমপ্লাইন্স অডিটের তুলনায় অনেক বেশি বড় একটি ক্ষেত্র এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। বিএসইসি তালিকাভুক্ত ৪০টি সিএ ফার্ম দ্বাড়া যদি ৩৫১টি কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল অডিট করা সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে এই ৩৫১টি কোম্পানির কর্পোরেট কমপ্লাইন্স অডিট বা সার্টিফিকেশন বিদ্যমান ২৬টি সিএস প্রফেশনাল প্র্যাকটিসিং ফার্ম দিয়েও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
নিম্নে কমপ্লাইন্স ও কর্পোরেট গভর্নেন্স সার্টিফিকেট বা কমপ্লাইন্স অডিট সার্টিফিকেট দেওয়ার মতো প্র্যাকটিসিং প্রফেশনাল ফার্মের তালিকা তুলে ধরা হলো যাতে করে বিএসইসি বিষয়টি নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বিএসইসি‘তে তালিকাভূক্ত ৪০টি সিএ ফার্মের তালিকা জানতে ক্লিক করুন।
২৬টি সিএস সদস্যের ফার্মের তালিকা জানতে ক্লিক করুন।