তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে একটি ভূমিদস্যু চক্র দীর্ঘদিন ধরে ‘সাবাজপুর’ চা বাগানের প্রায় ৫৫০ একর ভূমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে চক্রটি রাতের আঁধারে বাগানে ছোট কয়েকটি ঘরও নির্মাণ করেছে। প্রায় তারা বাগানের চা গাছ কেটে নষ্ট করার পাশাপাশি অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বাঁশ কেটে বিক্রি করছে। এছাড়া বাগানের চা শ্রমিকদের হুমকি-ধমকি ও নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এতে শ্রমিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে ‘সাবাজপুর’ চা বাগান মালিকানা গ্রহণ করে স্কয়ার গ্রুপ। ২০০৭ সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে চা বাগানের ইজারা গ্রহণ করে। বাগানের আয়তন প্রায় ২৮৮৭ একর। বাগানের মালিকানা গ্রহণের পর থেকেই স্কয়ার গ্রুপ সরকারের নির্ধারিত ইজারার শর্ত পালন করে ভূমিতে চা চাষ ও চা উৎপাদন করে আসছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করছে। বর্তমানে বাগানে ৫’শ শ্রমিক কাজ করছেন।
চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের ১৮ জুন হঠাৎ বোবারথল এলাকার একটি ভ‚মিদস্যু চক্র অবৈধভাবে ‘সাবাজপুর’ চা বাগানের লীজকৃত প্রায় ৫৫০ একর ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে কয়েকটি ঘর তৈরি করে। এরপর থেকে তারা চা শ্রমিকদের কাজ করতে বাধা দিচ্ছে। নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে বাগানের চা পাতা উত্তোলনের কাজ ব্যহত হচ্ছে। ওই ভূমিদস্যু চক্রটি ২০১৬ সালে একইভাবে বাগানের আরেকটি অংশের ভূমি দখলের চেষ্টা চালায়। পরে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু আবারো ওই চক্রটি বাগানের ভূমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি, এভাবে চলতে থাকলে লোকসানের মুখে পড়েব চা বাগান। এমনকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। এতে বেকার হবে চা শ্রমিকরা। রাজস্ব হারাবে সরকার। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগানের যে অংশের ভূমি চক্রটি দখল করে রেখেছে সেই এলাকাটি বেশ দুর্গম। তারা কয়েকটি টিলার ওপর ছোট ছোট কয়েকটি ঘর নির্মাণ করেছে। এসময় দূর থেকে দুই ব্যক্তিকে পাহাড় থেকে বাঁশ কেটে নিয়ে আসতে দেখা যায়। এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজনকে দূর থেকে দেখতে পেয়ে সেখানে তারা বাঁশ ফেলে ‘রাজ্জাক’ নামে একজনকে ডাকতে শোনা যায়। এলাকাটি অনিরাপদ সেজন্য সেখান থেকে দ্রুত ফিরে আসতে হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত ওই ভূমিদস্যু চক্রটি বাগানের ভূমি দখলের চেষ্টা করছে। কারও উপস্থিতি টের পেলে ওই চক্রের প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেখানে জড়ো হয়। তাদের ভয়ে কেউ এদিকে আসেন না।
তবে বাগানের ভূমি দখলের বিষয়ে অভিযুক্ত কারও সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাগানের কয়েকজন চা শ্রমিক ও পাহারাদার জানান, বোবারথল এলাকার ভূমিদস্যু একটি চক্রটি বাগানের দখলকৃত এলাকায় কাজে যেতে তাদের বাধা দিচ্ছে। নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। যার কারণে তারা চা পাতা সংগ্রহ করতে পারছেন না। চরম নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন।
সাবাজপুর চা বাগানের মহ-ব্যবস্থআপক আলী আহমেদ বলেন, কিছু দুস্কৃতিকারী ‘সাবাজপুর’ চা বাগানের ভূমি দখলের চেষ্টা করছে। তারা সেখানে কয়েকটি ঘরও নির্মাণ করেছে। প্রায় তারা বাগানের চা গাছ কেটে নষ্ট করছে এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান গাছ ও বাঁশ কেটে বিক্রি করছে। বাগানের কর্মরত শ্রমিকদের কাজে যেতে বাঁধা দিচ্ছে। নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বাগানের চৌকিদার ও গাড়ি চালকদের উপর হামলা চালাচ্ছে। ২০১৬ সালেও এভাবে দখলের চেষ্টা করেছিল। পরে প্রশাসনের সহায়তায় তাদের প্রতিহত করা হয়েছিল। এখন আবারও ওই দুস্কৃতিকারীরা বাগানের লীজকৃত ভূমিতে দখলের উদ্দেশ্যে ঘর তৈরি করেছে। দুস্কৃতিকারীদের প্রতিহত করার বিষয়ে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইন বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, আগে একবার বাগানের জায়গা দখল হয়েছিল। বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পেয়ে আমরা সেখানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এখন আবারও বাগানের জায়গা দখল হয়েছে কি না জানিনা। তবে বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কল ধরেননি।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, বাগানের ভূমি দখলের বিষয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।