জাকির হোসেন আজাদী: বাগেরহাটের ফকিরহাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেনের (ইউএনও) থাপ্পড়ে আহত হয়েছেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রবীণ রাজনীতিবীদ আলহাজ মো. মিজানুর রহমান। ইউএনওর গাড়ির সঙ্গে সাবেক এই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোটর সাইকেলের ধাক্কার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন মো. মিজানুর রহমান।
মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় মেরেই ক্ষান্ত হননি ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন, গালিগালাজ করে জোরপূর্বক গাড়ির পেছনে তাকে উঠিয়ে নিয়ে বেশকিছু সময় আটকে রাখেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ মানুষ বলছেন, ” একজন ইউএনওর কাছে এমন আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন উগ্র আচরণ অপ্রত্যাশিত। ইউএনও গাড়ি ব্যাক করে মিজান সাহেবের মটরসাইকেলে ধাক্কা দিলেন। আবার মিজান সাহেবকে দোষারোপ করলেন। মারলেন। গালি দিলেন। এটা স্বাধীন দেশে কখনোই মেনে নেয়া যায়না। এই জন্য এই দেশ স্বাধীন হয়নি। এই ধরনের সরকারি কর্মকর্তা আমাদের দরকার নেই”।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের কাঁঠালতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন মারধরের শিকার মো. মিজানুর রহমান।
চোখ ও কানে গুরুত্বর আঘাত থাকায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে মো. মিজানুর রহমানের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
আহত মো. মিজানুর রহমান ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের দুইবারের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
কাঁঠালতলা এলাকায় থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, খুলনা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি ফলতিতার দিকে যাচ্ছিল। মাত্র তিন সেকেন্ডের ব্যবধানে গাড়িটি ব্যাকে আসতে থাকে। তখন ওই রাস্তার পার্শ্বে পেছন থেকে উঠে আসা মিজানুর রহমানের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ইউএনওর গাড়িটির সামান্য ঘষা লাগে। প্রথমে গাড়িচালক নিচে আসেন। পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নামেন এবং মো. মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় দেন। পরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে যান ইউএনও।
প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রথমে গাড়িচালক নেমে এসে মিজানুর রহমানকে ধমকায়। পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় দেন।
আহত মো. মিজানুর রহমান বলেন, বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে গরুর ফার্মে যাচ্ছিলাম। কাঁঠালতলা মোড় এলাকায় পৌঁছালে দ্রুতগতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি ব্যাকে (পেছনে) আসে। তখন ইউএনওর গাড়ির সঙ্গে আমার মোটরসাইকেলের সামান্য ধাক্কা লাগে। সঙ্গে সঙ্গে ইউএনওর গাড়িচালক এসে আমাকে গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়িতে না উঠলে, ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে এসে আমাকে থাপ্পড় দেয়। ধাক্কা দিয়ে গাড়ির পেছনে ওঠায় এবং গালিগালাজ করে। গাড়িতে করে কয়েক কিলোমিটার নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি আমাকে ছেড়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, পরে আমি ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। চিকিৎসক আমাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাক, গান গলা বিশেষজ্ঞ দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিচার চাওয়ার মতো ভাষা নেই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক জনপ্রতিনিধিকে মারধরের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইউএনওর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
ফকিরহাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খান মোহাম্মাদ আরিফুল হক বলেন, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধিকে মারধর করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একজন ইউএনওর কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না। ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন শুধু মো. মিজানুর রহমানকে মারধর করেনি, এর আগেও একাধিক নাগরিক তার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে। তিনি যা করেছেন তা চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘনের মতো অপরাধ। ইউএনওকে বহিষ্কারপূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।
ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রত্যয় দাস বলেন, মো. মিজানুর রহমান বেশ অসুস্থ এবং মুখ-কান ফোলা থাকায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, তাকে কথা বলার জন্য গাড়িতে ওঠানো হয়েছে। পরিচয় জানার পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।