সরকার অবৈধ মাদক ব্যবসা নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গত ৪ঠা মে থেকে শুরু করেছে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান। এই অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রতিরাতেই মারা যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকমুক্ত সুন্দর সমাজ গঠনে মাদক বিরোধী অভিযান অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, যখন কথিত বন্দুকযুদ্ধে খুচরা মাদক ব্যবসায়ীরা মারা যায়। চলতি অভিযানে যতজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তাদের প্রায় সবাই খুচরা ব্যবসায়ী বলেই জানা গেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, আমদানীকারক, ডিলার, সরবরাহকারী তারা কোথায়? ব্যবসা বৈধ-অবৈধ যাই হোক, খুচরা বিক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছাতে প্রস্তুতকারক থেকে কমপক্ষে দুই থেকে তিন হাত হয়ে তারপর খুচরা বিক্রেতার হাতে এসে পৌঁছে। চলমান অভিযানে সেই সব রাঘব বোয়াল আমদানীকারক, ডিলার বা সরবরাহকারীদের তথ্য বা তথাকথিক বন্দুকযুদ্ধে নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মাদক ব্যবসায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের প্রত্যক্ষ মদদে ও সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদকের অভয়ারণ্য হয়েছে যা পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়। সরকারি প্রভাবশালী কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ। মাদকের খুচরা ব্যবসায়ীদের একটি বক্তব্যই হলো, “বড়ভাই অর্থাৎ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা আর স্যারদের মানে অসাধু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করেই খুচরা বিক্রেতারা মাদক ব্যবসা করে থাকে।”
গাছের শিকর উপরে না ফেলে শুধুমাত্র গাছের পাতা বা ছোট ছোট কান্ড ছেটে দিলে মূল গাছের তেমন কোন ক্ষতি হয় না। দু’চার দিন পর গাছ আবার পাতায় পাতায় ভরে ওঠে। মাদক ব্যবসার গডফাদার আর খুচরা বিক্রেতারাও তাই। বন্দুকযুদ্ধের নামে খুচরা বিক্রেতাদের নিধন করা হলেও গডফাদারের হয়তো সামান্য সময়ই লাগবে নতুন করে খুচরা বিক্রেতা তৈরি করতে। সমাজ থেকে মাদক নির্মুল করতে হলে গডফাদারদের নির্মুল করতে হবে। তাহলে খুচরা বিক্রেতারা অবৈধ পেশা পরিবর্তনে হয়তো বা বাধ্য হবে। কারণ, তারা যদি মাদক হাতে না পায়, তাহলে তো আর বিক্রি করার প্রশ্নই আসবে না।
মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী তথা সরকারের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। পারিবারিকভাবে সন্তানদের সুশিক্ষা প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক প্রচারণাসহ মাদকের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এছাড়া, যদি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও এর সাথে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরকেও কঠোরভাবে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর সেজন্য দেশ থেকে মাদকের বিষবৃক্ষ সমুলে উৎপাটনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সাথে সচেতন জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।