বেনাপোল প্রতিনিধি : জীবন বদলে গেছে শার্শার ভূমিহীন ১৮৮ পরিবারের সদস্যদের। সারা জীবনের চেষ্টায় যারা মাথা গোজার মত এক টুকরো ভূমি সংগ্রহ করতে পারেনি। আজ তারা সম্পদশালী হতে স্বপ্ন দেখছে। আর এ স্বপ্ন দেখাচ্ছে স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। যখন আশ্রয়হীনের মত ভূমিহীনরা গাছ তলায়, ফুটপথে বা অন্যের ছাদের নিচে পশু পাখির মত বসবাস করতো তারা আজ স্বাবলম্বি হতে শিখছে। শুধুমাত্র সম্ভব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর উপর।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার পর তারা আজ স্বাবলম্বি, ঘরের পাশে গড়ে তুলেছে, সবজির মাচা, গরু ছাগল পালনের জন্য করেছে গোয়াল ঘর। খালি জমিতে বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের শাক। এ সবুজের সমাহার জানান দিচ্ছে যে, তারা ঘর ও ভুমি পেয়ে স্বাবলম্বী হতে শিখছে। আজ তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনেক পাওয়ার হাসি যেন ঝিলিক দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের এ ঘর হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে। নিজের একটি পাকা-পরিচ্ছন্ন ঘরে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাদের নিরাপদ ও মজবুত স্থায়ী ঘর পেয়ে। এই মানুষগুলোর একসময় ছিলনা নিজস্ব কোন স্থায়ী ঠিকানা। খাস জমি কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙ্গা ঘরে থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করতেন তারা। কিন্তু বর্তমান সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে বাসস্থানসহ নানাবিধ সুবিধার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।
শার্শা উপজেলা সদর থেকে দক্ষিন-পূর্বে প্রায় ৯ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উলাশী বাজারের পার্শবর্তী খালধারে আশ্রয়ণের সারি সারি ঘর। যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এখানে গড়ে উঠেছে ভূমিহীনদের বসতি। আর খালধারে গড়ে উঠেছে সবুজের সমাহার। রয়েছে হাঁস-মুরগী আর গবাদি পশু পালনের সুব্যবস্থা। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগলের কাজ নিয়ে আর নিজ আঙ্গিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে। ছিন্নমুল মানুষের যেন এক খন্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন একদল নারী-পুরুষ। খালধারের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা রাসেল আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই পল্লীতে ১৭ টিসহ উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের শান্তির বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১৮৮। আরো ৭৬টি স্বপ্নের নীড় রয়েছে নির্মানাধীন। এ সকল আশ্রয়নের তাদের জীবনের শুরুটা ভূমিহীন হলেও এখন তারা আর ভূমিহীন নয়। মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য শুধু ঘর নয় সরকারি দুই শতক জমিও প্রদান করেন। এতে তারা হাঁস-মুরগী গবাদি পশু পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী এ মানুষগুলো। শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। আশ্রয়ণে বসবাসরত শতাধিক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। উলাশী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫ শত গজের মধ্যেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। ফলে এ আশ্রয়ণে শিক্ষার প্রভাবও পড়েছে। এতে আশ্রয়ন প্রকল্পের ছেলে মেয়েরা শিক্ষারও সুযোগ পাচ্ছে।
উলাশী আশ্রয়নে দেখা গেছে ছোট পরিসরে আদর্শ ছিমছাম সারি সারি ঘর। এসব ঘরে বাস করা মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানবেতর জীবনমান থেকে মুক্তি পেয়ে এখন তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছেন। উলাশী আশ্রয়নের বাসিন্দা জসিম হোসেন জানান, আগে আমরা অন্যের জায়গায় ছোট ভাঙ্গা ঘরে থেকে ৩টি শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টি মৌসুসে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতাম। সরকার আমাদের নতুন ঘর দেয়ায় এখন আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারছি। আগের মত কষ্ট আরনেই। একই কথা জমিলা, জয়নব বিবি, সালেহা খাতুন, দীন মোহাম্মদ, আজিজুর রহমানের।
শুধু স্থায়ী ঠিকানাই নয়, একটি বাড়ি, একটি আশ্রয় বদলে দিয়েছে তাদের জীবন। নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছে যাপিত জীবনের। বদলে গেছে প্রকল্পের আশপাশের দৃশ্যপট। বাড়ির চারপাশে বেড়ে উঠছে সবুজ বেষ্টনি, পালা হচ্ছে গবাদি পশু। খোলা হয়েছে নিত্যপণ্যের দোকান। দুই বছরে সবুজের সমারোহে ভরিয়ে দিয়েছেন তাদের বাড়ির অঙ্গিনা। মৌসুমী সবজি ও দেশী ফলের গাছ বেড়ে উঠছে তাদের ঘরের পাশে। ভাড়ার রিকশাভ্যান চালক থেকে নিজে মৎস ব্যবসায়ী হয়েছেন জসিম হোসেন। যে টাকা ভাড়া দিতেন সে টাকা ভবিষ্যতের জন্য সবাই মিলে সঞ্চয় করছেন। অনেকে নিজেদের সুবিধা মতো ঘরের সাথে পাওয়া জমিতে নানা ধরণের স্থাপনাও তৈরি করে নিয়েছেন। তিনি ভ্যানরিকশা চালানো ছেড়ে এখন মাছ ব্যবসায়ী হয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু জানান, ইতিমধ্যে যারা ঘর পেয়েছেন তারা স্বাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছেন। এছাড়াও করোনাকালে এসকল দরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। একইসাথে কোন ভূমিহীন, গৃহহীন যেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ রাখা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপজেলায় প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের যাচাই-বাচাই করে মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসাবে গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন। ফলে ঠিকানাবিহীন মানুষগুলো রঙিন ঘরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
তিনি আরো জানান, তাদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসছে। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল।