আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় আঘাত হানা ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে তুরস্ক- সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কের ৪৪ হাজার ২১৮ এবং সিরিয়ায় ৫ হাজার ৮০০ জন।
এর আগে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরের দিকে সিরিয়া এবং তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর কিছুক্ষণ পর ফের ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প হয়। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ফের ৬ দশমিক ৪ এবং ৫ দশমিক ৮ মাত্রায় দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।
প্রথম ভূমিকম্পের পর দেশটিতে ৯ হাজার ১৩৬ এর বেশি আফটারশক হয়েছে। ভূমিকম্পে দেড় লাখেরও বেশি ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পটিকে গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভূমিকম্পে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ১০০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে তুরস্ক সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকায় মার্চের প্রথম দিকে ২ লাখের বেশি বাড়ি নির্মাণ শুরু করবে এবং এক বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবে।
প্রসঙ্গগত, ১৯৩৯ সালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্কের পূর্ব এরজিনকান প্রদেশে ৩৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
উল্লেখ্য, তুরস্কের সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর বসবাস। তাই বাকি নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সময় লাগছে। এরই মধ্যে সিরীয় সরকার দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে তুরস্কের ৭টি প্রদেশের অন্তত ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরগুলো হলো গাজিয়ান্তেপ, কাহরামানমারাস, হাতে, ওসমানিয়া, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস।
এ ছাড়া সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা এবং লাকাতিয়া শহরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ভূমিকম্পে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার গভীরে। এর প্রায় ১১ মিনিট পর আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে তুরস্কের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটি এলাকায়। এ দফায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। দ্বিতীয় দফায় ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী গাজিয়ান্তেপ তুরস্কের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা। এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, তুরস্ক ও সিরিয়া ছাড়াও লেবানন এবং সাইপ্রাসেও এর ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে। এমনকি মিসরের রাজধানী কায়রোতেও এর তীব্রতা টের পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিণত হচ্ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র ছায়াযুদ্ধে