তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: কখনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, কখনো ঊর্ধ্বতন কর্মকতা, আবার কখনো ঠিকাদার সেজে বিভিন্ন দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে পালিয়ে যেত তারা। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে ঘুরে তারা করতো এমন ভয়ংকর প্রতারণা। ছাড় দেয়নি সিলেট বিভাগকেও। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ থেকে এমন এমন অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নিয়েছে দুই লাখ টাকার পণ্য।
তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা পড়তে হয়েছে পুলিশের জালে। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থান থেকে এ চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফখরুজ্জামান তপু ভূঁইয়া (৪৫), মো. মোবারক হোসেন (৩৪), মো. খোকন মিয়া (৪৩) ও মো. মুশফিকুর রহমান মুন্সী (৩৫)।
পুলিশ বলছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইবনে সিনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেজে ঢাকার ইলেক্ট্রো মার্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫টি কনকা সিলিং ফ্যান ক্রয় করে ওই ব্যক্তিরা। এরপর ফ্যানের টাকা চাইলে ক্যাশ নেই উল্লেখ করে একটি চেক দেয়। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের স্বাক্ষরের সঙ্গে চেকে করা স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই। এমনকি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নামের সঙ্গেও মিল নেই। এদিকে এ সুযোগে ফ্যান নিয়ে পালিয়ে যায় ফখরুজ্জামান ও তার চক্র। পরে অভিযোগ করলে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফখরুজ্জামান ও তার চক্রের প্রতারণার মূল হাতিয়ার ছিল পরের জায়গা ও পরের ভবন। তারা প্রথমে যে কোনো একটি নির্মাণাধীন ভবন রেড়ি করে। পরে সুযোগ বুঝে নিজেদের সেই ভবন নির্মাণের ঠিকাদার হিসেবে পরিচয় দেয়। ভবন নির্মাণে ক্যাবল প্রয়োজন বলে পাশের দোকান থেকে ক্যাবল কিনে আনে। এরপর নগদ টাকা নেই বলে তাদের চেক দেয়। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায়, সেই অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। সেখানে দেওয়া স্বাক্ষরও ভুয়া। ওই ফাঁকে সেই ক্যাবল নিয়ে পালিয়ে যায় ফখরুজ্জামান ও তার চক্র। এভাবে এই চক্রটি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার থেকে প্রায় এক লাখ টাকা ও সুনামগঞ্জ থেকে সোয়া লাখ টাকা এবং গোপালগঞ্জ থেকে প্রায় সোয়া লাখ টাকা, কিশোরগঞ্জ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা ও ঢাকার মিরপুর থেকে প্রায় ৭৫ হাজার টাকার পণ্য নিয়ে পালিয়ে যায়।
ফখরুজ্জামান তপু ভূঁইয়া নাম হলেও চেকে নাম উল্লেখ করা থাকে ইকবাল হোসেন। এই ভুয়া নাম দিয়েই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলে সে। পণ্য কেনার পর সে অ্যাকাউন্টেরই চেক দেয় তারা। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় ইস্যু করা চেকে সেই স্বাক্ষরও ভুয়া।
পুলিশ জানায়, কখনো ঠিকাদার, কখনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সেজে প্রতারণা করেন ফখরুজ্জামান। তিনি ঠিকাদার সেজে নির্মাণাধীন ভবনের জন্য ক্যাবল কেনার নামে প্রতারণা করে। আবার প্রতিষ্ঠান চেয়ারম্যান বা ঊর্ধ্বতন কর্মকতা সেজেও প্রতারণা করে। সর্বশেষ ইবনে সিনা হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা সেজে ২৫টি ফ্যান কেনার ভান করে সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায়, ফখরুজ্জামান এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঘুরে ঘুরে প্রতারণা করে। তার দলে চালক রয়েছে একজন। সেই চালক গাড়ি নিয়ে এক জেলায় প্রতারণার পর পালিয়ে যায় অন্য জেলায়। এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গোপালগঞ্জে প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে।
ফখরুজ্জামান ছিলেন প্রবাসী। তিনি সৌদি আরবে থাকতেন। সেখানেই চাকরি করতেন, আয়ও ভালো ছিল। কিন্তু আইপিএল নিয়ে জুয়া খেলার পর তার জীবনে দুর্দিন নেমে আসে। আইপিএল নিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলে ১০ লাখ টাকা খোয়ানোর পর দেশে ফিরে এমন প্রতারণার পথ বেছে নেন তিনি।