নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত ভারতীয় সিনেমা ‘ফারাজ’ প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. খসরুজ্জমান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সিনেমা ‘ফারাজ’ বাংলাদেশের কোন সিনেমা হল এবং সব ধরনের অনলাইন প্লাটফর্মে মুক্তি না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন হলি আর্টিজনের ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ।
রিটে বিবাদী করা হয় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে।আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রিটের পর আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘সিনেমায় যেটি চিত্রায়িত করা হয়েছে, সেখানে দেখানো হয়েছে দুইজন জঙ্গি কথা বলছেন, তার মধ্যে একজনের সঙ্গে অবিন্তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল বা আছে। তার পোশাক-পরিচ্ছেদ এমনভাবে দেখানো হয়েছে, যা আমাদের সভ্য সমাজে শিক্ষিত পরিবারের লোকজন পরিধান করে না।
এই সিনেমায় মেয়েটাকে চারিত্রিকভাবে অবনমিত করা হয়েছে। এমনকি পুলিশকে ব্যর্থ দেখানো হয়েছে, যা দেশের সার্বভৌমত্বেরও প্রশ্ন। এসব কারণে এই সিনেমাটি বাংলাদেশের কোনো প্ল্যাটফর্মে আসা উচিত নয়। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের হয়েছে। ’
ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত বলিউড সিনেমা ‘ফারাজ’ গত ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছে। হংসল মেহতা নির্মিত সিনেমাটির প্রযোজক আরেক বলিউড নির্মাতা অনুভব সিনহা।
সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি নুরুজ্জামান লাবুর লেখা ‘হোলি আর্টিজান: একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান’ বইয়ের সূত্র ধরে।
মুক্তির আগেই এ সিনেমা নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছিল অবিন্তার পরিবার। ২১ জানুয়ারি ঢাকায় এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন তার মা রুবা আহমেদ। তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ফারাজ সিনেমাটি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। সিনেমাটির নির্মাতা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এ ঘটনায় তারা সহমর্মিতাও প্রকাশ করেনি। আইনি নোটিশ পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অবিন্তার পরিবার সূত্র জানায়, অনুমতি ছাড়াই সিনেমাটিতে অবিন্তা কবির ও তার পরিবারের সদস্যদের চরিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়ে অবিন্তার পরিবারের সদস্যরা বিব্রত। তবে এর আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ‘ফারাজ’ সিনেমা প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন।
প্রসঙ্গগত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের ১০০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ফারাজ। হংসল মেহতা পরিচালিত সিনেমাটি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। এরপর সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সিনেমা মুক্তির স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে রিট করা হয়। ফারাজ সিনেমার মুক্তির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ জারি করতে অস্বীকার করেছেন ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট।
তবে আদালত শর্ত দিয়েছেন, ছবিটি পর্দায় দেখানোর সময় এই মর্মে একটি ‘ডিসক্লেইমার’ দিতে হবে যে, সিনেমাটি হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও এতে তুলে ধরা ঘটনাগুলো ‘সম্পূর্ণ কাল্পনিক’ (পিওর ওয়ার্ক অব ফিকশন)।
হলি আর্টিজান হামলায় নিহতদের অন্যতম অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, তার নিহত মেয়ের প্রাইভেসি লঙ্ঘন করে, পরিবারের কোনো সম্মতি না নিয়ে ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করে এই ফারাজ সিনেমা বানানো হচ্ছে।
সিনেমার মুক্তি আটকাতে তিনি ভারতের আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে দিল্লি হাইকোর্টের একক বিচারপতির বেঞ্চ ফারাজ সিনেমার মুক্তির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেন।
সিনেমাটিতে ফারাজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কারিনা কাপুরের চাচাতো ভাই জাহান কাপুর। পরেশ রাওয়ালের ছেলে আদিত্য রাওয়াল এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এটি তাদের অভিষেক চলচ্চিত্র। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমির আলী, জুহি বব্বর, শচিন লালওয়ানি, পলক লালওয়ানি ও রেশম সাহানিসহ আরও অনেকে।
আরও পড়ুন: