আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পানামায় ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৯ জন অভিবাসন প্রত্যাশী নিহত হয়েছেন। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ৬৬ জন যাত্রী নিয়ে পানামার গুয়ালাকা শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় দুই পর্বতের মধ্যবর্তী জায়গায় পড়ে যায় বাসটি।
জানা যায়, বাসটিতে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। পথ হিসেবে তারা মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকাকে সংযুক্তকারী পানামার বিপজ্জনক বন্য এলাকা ড্যারিয়েন গ্যাপ বেছে নেন। ওই অঞ্চলটির সড়কগুলোতে অসংখ্য বাঁক রয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বাসটির অর্ধেকেরও বেশি যাত্রী নিহত হয়েছে। আহত অন্তত ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অনেকের অবস্থা বেশ গুরুতর। এর আগে পানামার ইতিহাসে কোনো দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এতজন অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত হননি।
গুয়ালাকার মেয়র লুইস ম্যানুয়েল এট্রিবি মিরান্ডা বলেন, হতাহতদের জাতীয়তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে আমাদের ধারণা, তাদের অধিকাংশই হাইতির বাসিন্দা। এখন তাদের আত্মীয়স্বজন ও দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ প্যারিলা জানিয়েছেন, এ দুর্ঘটনায় তার দেশের নাগরিকরাও নিহত-আহত হয়েছেন। প্যারিলা হতাহতের শিকার কিউবান নাগরিক ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
পানামার প্রেসিডেন্ট নিটো কর্টিজো বলেন, আমাদের সরকারি দলগুলো জীবিতদের সাহায্যে অত্যন্ত আন্তরিতার সঙ্গে কাজ করছে। পানামা ও এ অঞ্চলের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।
পানামার ডেভিড শহরের একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. ক্যাথরিন গুয়েরা বলেন, আমরা একটি বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছি। দুর্ঘটনায় জীবিতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইতি, কলম্বিয়া ও কিউবার অসংখ্য নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথ হিসেবে ড্যারিয়েন গ্যাপের বিপজ্জনক রেইনফরেস্ট বেছে নিচ্ছেন। এ পথ দিয়ে আসার সময় অনেকেই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মী জুয়ান প্যাপিয়ার বলেন, যখন আমি ওই অঞ্চলে গিয়েছিলাম তখন দেখেছি, আঞ্চলিক বাসগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী বহন করে। এমনকি কোনো বিরতি ছাড়াই বাসচালক ও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা দীর্ঘ যাত্রা করে থাকেন।
পরিসংখ্যান বলছে, চরম অর্থনৈতিক সংটের মুখে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার ভেনেজুয়েলিয়ান নাগরিক ড্যারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশের প্রায় আড়াই লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী এ পথে যাত্রা করেছেন। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান