আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় আঘাত হানা ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া বরফ শীতল তাপমাত্রা লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, অনেকের চরমভাবে সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভূমিকম্পের পর দুই দেশে অন্তত ৮৭০,০০০ মানুষের জরুরিভাবে খাদ্যের প্রয়োজন, শুধুমাত্র সিরিয়াতেই ৫.৩ মিলিয়ন লোক গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। সময় যত গড়াচ্ছে ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকাদের জীবিত উদ্ধারের আশা। তারপরও উদ্ধারকারীরা জীবিতদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভূমিকম্পের চার দিন পর অলৌকিকভাবে বেশ কয়েকজনকে জীবত উদ্ধারও করেছেন তারা। এরমধ্যে বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল ১৭ বছরের এক বালিকাকে জীবিত উদ্ধার করেছে।
জাতিসংঘ বলছে, ভূমিকম্পের পরে সিরিয়ায় ৫৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হতে পারে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় প্রায় ৯ লাখ মানুষের রান্না করা খাবারের প্রয়োজন।
এদিকে সবার কাছে যাতে সহায়তা পৌঁছায় সেজন্য মানবাধিকার এবং মানবাধিকার বিষয়ক সকল বাধ্যবাধকতার প্রতি সম্মান জানানোর আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপ থেকে এক কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের সম্মিলিত উদ্ধারকারী দল। শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে পাঠানো এক বার্তায় তারা জানায়, ১৭ বছর বয়সী জীবিত এক কিশোরী ছাড়াও তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল।
সোমবারের ভূমিকম্পটি ১৯৩৯ সালের পর তুরস্কের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল। আগের সেই ভূমিকম্পে পূর্ব এরজিনকান প্রদেশে ৩৩ হাজর মানুষ মারা গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, তুরস্কের সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর বসবাস। তাই বাকি নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সময় লাগছে। এরই মধ্যে সিরীয় সরকার দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে তুরস্কের ৭টি প্রদেশের অন্তত ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরগুলো হলো গাজিয়ান্তেপ, কাহরামানমারাস, হাতে, ওসমানিয়া, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস।
এ ছাড়া সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা এবং লাকাতিয়া শহরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ভূমিকম্পে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার গভীরে। এর প্রায় ১১ মিনিট পর আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে তুরস্কের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটি এলাকায়। এ দফায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। দ্বিতীয় দফায় ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী গাজিয়ান্তেপ তুরস্কের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা। এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, তুরস্ক ও সিরিয়া ছাড়াও লেবানন এবং সাইপ্রাসেও এর ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে। এমনকি মিসরের রাজধানী কায়রোতেও এর তীব্রতা টের পাওয়া গেছে।