আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় আঘাত হানা ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তুরস্কে ১২ হাজার ৩৯১ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে, সিরিয়ায় উদ্ধার করা মরদেহের সংখ্যা তিন হাজার ছুঁই ছুঁই।
ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনও অসংখ্য মানুষ আটকে থাকায় মৃতের সংখ্যা আর বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানায়, ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কেই ১২ হাজার ৩৯১ জন মারা গেছেন।
এদিকে সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিরিয়ায় সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২০০ জনের বেশি বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে থাকা উদ্ধারকারী গোষ্ঠী হোয়াইট হেলমেট জানায়, সেখানে কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০ জন মারা গেছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে, আলজাজিরা।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, তার দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য দুটি অতিরিক্ত সীমান্ত গেট খুলে দিতে কাজ করছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন বলেন, সোমবারের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সিরিয়া ও তুরস্কে আন্তর্জাতিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে আগামী মার্চে একটি সম্মেলনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
গত ২৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইস্তাম্বুল স্টক এক্সচেঞ্জ জানায়, ভূমিকম্পের প্রেক্ষিতে এটি পাঁচ দিন বন্ধ থাকছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান দুর্যোগ কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর দেশটিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ অপর্যাপ্ত বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
ভূমিকম্পের জেরে দুই দেশের সড়ক ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দুর্গত এলাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় সহায়তা। এ অবস্থায় উদ্ধার কাজে সময় বেশি লাগায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপাপড়াদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এরইমধ্যে ২৪টির বেশি দেশ উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ায়। তবে সংকট সামাল দিতে আরও সাহায্যের প্রয়োজন দেশ দুটির। ইতোমধ্যে কাতার সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ হাজার ভ্রাম্যমাণ ঘরসহ ত্রাণসামগ্রী, পর্যাপ্ত পরিমাণ তাঁবু ও শীতবস্ত্রও পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, ভয়াবহ ভূমিকম্পপরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম ও সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিশেষ উদ্ধারকারী দল তুরস্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছে। দলটিতে সেনাবাহিনী থেকে ২৪ জনের একটি মধ্যম উদ্ধারকারী দল, ১০ জনের মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১২ জন সদস্য রয়েছেন।
উল্লেখ্য, তুরস্কের সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর বসবাস। তাই বাকি নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সময় লাগছে। এরই মধ্যে সিরীয় সরকার দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে তুরস্কের ৭টি প্রদেশের অন্তত ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরগুলো হলো গাজিয়ান্তেপ, কাহরামানমারাস, হাতে, ওসমানিয়া, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার গভীরে। এর প্রায় ১১ মিনিট পর আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে তুরস্কের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটি এলাকায়। এ দফায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। দ্বিতীয় দফায় ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী গাজিয়ান্তেপ তুরস্কের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা। এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, তুরস্ক ও সিরিয়া ছাড়াও লেবানন এবং সাইপ্রাসেও এর ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে। এমনকি মিসরের রাজধানী কায়রোতেও এর তীব্রতা টের পাওয়া গেছে।