নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জের সদর থানাধীন কোর্টগাঁও এলাকায় ত্রিভুজ প্রেমের জেরে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ জেসিকে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার প্রধান আসামী প্রেমিক বিজয় রহমানকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। উক্ত মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বজনরা।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-৩ ও র্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা হতে ত্রিভুজ প্রেমের জেরে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ জেসিকে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার প্রধান আসামী বিজয় রহমান (২২), পিতা-আরিফুজ্জামান আরিফ, সাং-মধ্যকোর্টগাঁও, থানা-সদর, জেলা-মুন্সীগঞ্জকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত বিজয় রহমান এর সাথে আদিবা আক্তার এবং ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসি প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। প্রেমের সম্পর্কের মাঝে গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং আদিবা আক্তার বিয়ের পরিকল্পনা করে। তাদের বিয়ের বিষয়টি ভিকটিম জেসিকা মাহমদু জেসি জানতে পারায় বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন কথাপোকথনের স্ক্রীনশর্ট এবং বিভিন্ন ভিডিও আদিবা আক্তারের মেসেঞ্জারে পাঠায়। সেগুলো দেখে প্রেমিক বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেন অপর প্রেমিকা আদিবা। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার মাঝে কথা কাটাকাটি হতে থাকে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বিজয় এবং আদিবা একত্রে যোগসাজসে জেসিকে উচিত শিক্ষা হিসেবে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী ধৃত বিজয় বিষয়টি ফয়সালা করার অজুহাতে তার বাসায় দুই প্রেমিকা আদিবা ও ভিকটিম জেসিকে ডেকে নিয়ে আসে। তারা তাদের সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনার জন্য বিজয়ের বাসার ছাদে মিলিত হয়। অতঃপর সেখানে বিজয় রাগান্বিত হয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে থাকে ও জেসিকে আদিবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বলে। কিন্তু জেসি তার কথায় রাজি না হওয়ায় আদিবা জেসির গালে সজোরে থাপ্পর মারে। একপর্যায়ে জেসি সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করলে বিজয় এবং আদিবা দুজনে মিলে জেসিকে এলোপাতাড়ি চর-থাপ্পর মারতে থাকে। তাদের অত্যাচারে তখনও জেসি ক্ষমা চাইতে রাজি না হলে বিজয় ও আদিবা মিলে জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তখন বিজয় ও আদিবা কোন দিকবিদিক না পেয়ে জেসির মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য ৫ তলা বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। তৎক্ষণাৎ বিজয় ও আদিবা ছাদ থেকে নিচে নেমে এসে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিমকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত বিজয় ভিকটিম জেসির ভাইকে জেসির অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আসতে বলে। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান জেসি আরও ১ ঘন্টা আগে মৃত্যুবরণ করেছে। উক্ত মৃত্যুর ঘটনা শুনে ধৃত বিজয় ও আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ভিকটিম জেসির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারে জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেসির ভাই মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানায় গ্রেফতারকৃত বিজয় ও তার অপর প্রেমিকা আদিবাসহ আরও ১/২ জন অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা রুজুর পর ০৪/০১/২০২৩ তারিখ উক্ত হত্যার প্রধান আসামী বিজয় এর অপরাপর সহযোগী আদিবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয় এবং সে বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে।
ভিকটিম জেসির পরিবারের সদস্যদের নিকট হতে জানা যায় যে, ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসি(১৬), পিতা-সেলিম দেওয়ান, সাং-দক্ষিণ কোর্টগাঁও, থানা ও জেলা-মুন্সীগঞ্জ। সে মুন্সীগঞ্জ আলবার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। গত ০৩/০১/২০২৩ তারিখ আনুমানিক ১৬০০ ঘটিকার সময় গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং আদিবা দুজনে ভিকটিম জেসিকার বাসায় গিয়ে জেসিকাকে গ্রেফতারকৃত বিজয়ের বাসায় নিয়ে যায়। একই তারিখ ১৮০০ ঘটিকার সময় বিজয় জেসিকার ভাইকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে জেসিকার অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আসার জন্য বলে। পরবর্তীতে জেসির পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে জেসিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।
গ্রেফতারকৃত বিজয় রহমান ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডঃ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্টসিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেছে এবং ২০২২ সালে মুন্সীগঞ্জ সরকারী হরগঙ্গা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সে জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে ০৪ দিন, ফরিদপুরের আটরশি মাজারে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। পরবর্তীতে ০১/০২/২০২৩ তারিখে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক বন্ধুর বাসায় এসে গাঁঢাকা দিয়ে থাকতে শুরু করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন: