নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ, মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন দু’টি উৎসবের অন্যতম একটি। ঈদুল আজহার প্রধান আকর্ষণ পশু কুরবানি করা। পশু কুরবানির অনেক ফজিলত রয়েছে। কুরবানির পশু কেনা ও জবাই সংক্রান্ত ১২টি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
১. যার ওপর ছদকা ফিতর ওয়াজিব তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব। কিন্তু ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও যদি করতে পারে, তবে সওয়াব পাবে।
২. মুসাফিরের ওপর (যখন সে তার ঘরবাড়ি ও এলাকার বাইরে সফরে থাকে) কুরবানি ওয়াজিব নয়।
৩. ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত এই তিনদিন কুরবানি করার সময়। এই তিন দিনের মধ্যে যেদিন ইচ্ছা সেদিনই কুরবানি করা যায়; কিন্তু প্রথম দিন সবচেয়ে উত্তম, তারপর দ্বিতীয় দিন ও তারপর তৃতীয় দিন।
৪. ঈদুল আজহার নামাজের পর কুরবানি করতে হবে।
৫. ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পর আর কুরবানি হবে না।
৬. কুরবানির তিনদিনের মধ্যে যে দু’টি রাত অন্তুর্ভূক্ত, সেই দুই রাতেও কুরবানি করা জায়েজ। কিন্তু রাতের বেলায় জবাই করা ভালো নয়। যদি কোনো একটি রগ কাটা না হয় তবে কুরবানি জায়েজ হবে না।
৭.কেউ জিলহজের ১০ বা ১১ তারিখে সফরে ছিল বা গরীব ছিল, কিন্তু ১২ তারিখে সূর্যাস্তের আগে সে বাড়ি এসেছে বা কোনোভাবে সম্পদশালী হয়েছে অথবা কোথাও ১৫ দিন থাকার নিয়ত করেছে, এসব অবস্থায় তার কুরবানি ওয়াজিব হবে।
৮. নিজের কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। যদি নিজে জবাই করতে না পারে, তবে অন্যের দ্বারা জবাই করা যাবে। কিন্তু নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো।
৯ .কুরবানি করার সময় মুখে নিয়ত করা ও দোআ উচ্চারণ করা জরুরি নয়। শুধু মনে চিন্তা করে নিয়ত করে মুখে শুধু বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করলে তার কুরবানিও জায়েজ হবে। কিন্তু স্মরণে থাকলে জায়েজ হলেও উক্ত দোআ দু’টি পড়া বেশি উত্তম।
১০. কুরবানি শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়। এমন কি অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান যদি সম্পদের মালিক হয়, তবুও তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয় ও মা-বাবার উপরও ওয়াজিব নয়। যদি কেউ সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানি করতে চায়, তবে তার নফল কুরবানি হবে। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্কের সম্পদ থেকে কিছুতেই কুরবানি হবে না।
১১. বকরী, পাঠা, খাসি, ভেড়া, দুম্বা, গাভি, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট এই ধরনের গৃহপালিত পশু দিয়ে কুরবানি করা জায়েজ। হরিণ ও অন্যান্য হালাল বন্যপশু দিয়ে কুরবানি আদায় হবে না।
১২. গরু, মহিষ ও উট- এই তিন প্রকার পশুতে ৭ জন পর্যন্ত অংশীদার হয়ে কুরবানি করতে পারে। তবে কুরবানি জায়েজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো- কারো অংশ যেন ৭ ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম না হয় ও কারো যেন শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত না থাকে, সবারই যেন কুরবানির নিয়ত থাকে। অবশ্য যদি কারো আকিকার নিয়ত থাকে, তবে সেটাও জায়েজ হবে। কিন্তু যদি একজনেরও শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত থাকে, কুরবানির বা আকিকার নিয়ত না থাকে, তবে কারো কুরবানিই জায়েজ হবে না। এমনিভাবে যদি মাত্র একজনের অংশ ৭ ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হয়, তবে অংশীদারদের সবার কুরবানি নষ্ট হয়ে যাবে।