স্বাস্থ্য ডেস্ক: নভেম্বর মাস ফুসফুস ক্যান্সার সচেতনতা মাস। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ এই ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। এমাসে ফুসফুস ক্যান্সার সচেতনতা উপলক্ষে আমাদের ধারাবাহিক আলোচনা থাকবে। আরো মনে করা হতো শুধুমাত্র পুরুষরাই এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে নারী প্রায় সমভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। আজ আমরা জানবো ফুসফুস ক্যান্সার কি? এর কারণসমূহ এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
ফুসফুস ক্যান্সার কি? ফুসফুসের মধ্যে শ্বাসনালীর ভিতরে যে আবরণ রয়েছে সেই কোষে সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ফুসফুস ক্যান্সার হয়। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে যার মধ্যে অ্যাডনোকার সিঙ্গামা স্কোয়ামশিসেল কারবিসোমা, লাজসেল আনডিফারেনসিয়েটেড কারসিনোমা অন্যতম। এছাড়া স্মল ক্যান্সারও রয়েছে। প্রতি ১০ জন ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর মধ্যে এগুলো যথাক্রমে ৪ জন,৩ জন ও ১ জন অনুপাতে বিদ্যমান।কারা উচ্চ ঝুঁকিতে?
১. তামাক ব্যবহারকারী: ধুমপান ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ। প্রতিত ১০ জন ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৮.৫ জনই ধুমপায়ী। বাকীদের মধ্যেও একটা বড় অংশ নিজে ধুমপান না করলেও অনিচছাকৃতভাবে ধূমপায়ীর কাছাকাছি অবস্থানের কারণ ধূমপানের শিকার। তামাক পাতার মধ্যে প্রায় ৭০০০ প্রকার রাসায়নিক রয়েছে। য়ার মধ্যে আন্তত ৭০টা রাসায়নিক ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
২. রেডন গ্যাস: প্রাকৃতি কিভাবে বাতায়, মাটি ও পাথরের মধ্যে এই গ্যাস পাওয়া যায়। যা ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এজন্য যারা নির্মাণ শ্রমিক, ঢালাই শিল্প, জাহাজ ভাঙ্গা শিলোপ কাজ করেন তাদের সতর্কভাবে মাস্কপরিধান করে কাজ করা উচিত। এছাড়া আরও ভারি ধাতু যেমন- আর্সেনিক অ্যাসবেস্ট, ক্যাডমিয়াম ক্রামিয়াম, নিকেল, বেরিলিয়াম, সিলিকা, কয়লা দ্বারা যারা আক্রান্ত হন তাদের ও উচ্চ ঝুঁকি আছে।
৩. ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস: যাদের পরিবারে রক্ত সম্পর্কীয়দের মধ্যে ফুসফুস ও অন্যান্য রয়েছে। পরিবারে অল্প বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হবার ইতিহাস রয়েছে।
৪. ফুসফুসের রোগ রয়েছে যাদের: দীর্ঘস্থায়ী শুক্ক কাশির রোগ যেমন সিওপিডি,ব্রস্কয়াল অ্যাজমা, টিবি পালমোনারী ফাইব্রোসিস এ আক্রান্ত থাকলে তাদেরও ঝুঁকি রয়েছে।
৫. সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং: যারা ধুমপায়ীর সাথে বসবাস করেন এমন নারী ও শিমুরাও ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য পাবলিক প্লেস এবং বাড়ীতে ধুমপান করা উচিত নয়। উপরোক্ত সবাই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে কাদের আমরা স্ক্রিনিং করবো? বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি হলে এবং ঙারা ঝীবনে অন্তত ৭৩০০ প্যাকেট ধুমপান করেছেন।
এ ধরনের মানুষদের কোনো সমস্যা না থাকলেও ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিয়মিত চেক-আপ করানো উচিত। স্ক্রিনিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে যদি প্রাথমিক অবস্থায় ফুসফুস ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে এ জীবনগুলো বাচানো সম্ভব হবে। এভাবে আমরা জানা ও অসচেতনতার মাধ্যমে নিজেও নিজের পরিবার ও আপনজনদের ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে উৎসাহিত করতে পারি।
লেখক: ডা. মো: তৌছিফুর রহমান, এমবিবিএস (শসোমেক), সিসিডি (বারডেম) এমডি (অনকোলজি) এমএসিপি (আমেরিকা) সহকারী অধ্যাপক ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ বগুড়া।