সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: আবারও সিরাজগঞ্জের তাড়াশে কৃষকের গোয়াল ঘর থেকে তিনটি গরু চুরি হয়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) গভীর রাতে গোয়াল ঘরের দরজা ভেঙ্গে ওই গরু তিনটি চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। তাড়াশ পৌর এলাকার ভাদাশ গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ২ টি ও তার ছোট ভাই মজনুর ১ টি গরু চুরি হওয়ায় মানুসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তারা। এতে ওই কৃষেকর প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতি গ্রস্থ কৃষক নজরুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেন, গত রবিবার (২৮ এপ্রিল) ১২টা পর্যন্ত গোয়াল ঘরে গরু দেখে ঘুমাতে যাই। সকালে আমার মা গোয়াল ঘরের চাটা (দরজা) ভাঙ্গা দেখতে পায়। এ সময গোয়াল ঘরে গিয়ে গরু দেখতে না পেয়ে তিনি চিৎকার শুরু করেন।
এ নিয়ে তাড়াশে গত সাড়ে তিন মাসে কৃষকের গোয়াল ঘর থেকে প্রায় অর্ধশত গরু চুরি হলো। এতে স্থানীয় কৃষক ও খামারীদের প্রায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। আর বাকি খামারীরা এভাবে চুরির ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন। ফলে এলাকায় গরু চোরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় প্রায়ই গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। আর চুরি আতংকে কৃষক ও গরুর খামারীরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে গোয়াল ঘর।
এছাড়াও প্রায় প্রতিরাতেই গরু চুরি কিংবা কোন না কোন চুরির ঘটনা ঘটছেই। যা নিয়ে উপজেলায় জনগণের মাঝে উদ্বেগ বাড়ছে।পুলিশি তৎপরতা না থাকার কারণেই এসব চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ফলে নিরুপায় হয়ে অনেক কৃষকেরা গৃহপালিত পশুর নিরাপত্তায় রাত জেগে পাহারা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ দিকে চুরি ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসন থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপ গুলো হচ্ছে, রাত জেগে নিজ নিজ এলাকা পাহারা দেয়া, বিট পুলিশিং সদস্যদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া, রাত্রিকালীন পুলিশি টহল জোড়দার করা, সর্বোপরি এলাকা আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যে কোন তথ্য পুলিশকে জানানো।
স্থানীয় এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি তালম ইউনিয়নের রোকনপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেনের গোয়াল থেকে ৭টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। যার আনুমানিক মূল্যে ৬ লাখ টাকা।
এরপর ১৪ জানুয়ারি একই ইউনিয়নের বড়ইচড়া ভেংড়ী গ্রামে আলতাফ হোসেনের গোয়াল ঘরের ইটের গাথুনী ভেঙ্গে ৫টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। যার আনুমানিক মূল্যে ৬ লাখ টাকা। এ ঘটনায় চোর সন্দেহে তালম ইউনিয়নের গাবরগাড়ী গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে ঠান্ডু মিয়া ও বড়ইচোড়া-ভেংড়ী গ্রামের আবু বক্কারের ছেলে জহুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা পুলিশ গ্রেফতারও করেন। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করেন।
এ ছাড়াও গত ২০ জানুয়ারি গভীর রাতে উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের কালিদাসনীলি গ্রামের আজাদের গোয়াল ঘরের তালা ভেঙ্গে ৫টি গরু চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৮ লাখ টাকা।
এপ্রিলের প্রথম দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মথুরাপুর গ্রামের তজিম উদ্দিনের গোহাল ঘর থেকে ৬ টি গরু চুরি যায়। যার আনুমানিক মূল্য ৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়াও গত ২০ এপ্রিল গভীর রাতে সগুনা ইউনিয়নের লালুয়া মাঝিড়া গ্রামে কৃষক হায়দার ৪ টি ও তাড়াশ পৌর শহরের থানা পাড়া এলাকার এম মোনায়েম হোসেনের গোয়াল ঘরের তালা ভেঙে ২টি গরু চুরি করে নেয় চোরের দল। চুরি যাওয়া চারটি গরুর আনুমানিক বাজার দাম প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এ দিকে গরু চুরির পাশাপাশি সেচ যন্ত্র, শ্যালো মেশিন ও অন্যান্য জিনিসও চুরি অব্যহত রয়েছে।
উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের খামারী মো. আয়নাল হক বলেন, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আমার খামারে ৫ টি গরু মোটাতাজা করছি। কিন্তু চারিদিকে যেভাবে চোরের উপদ্রব বেড়েছে তাতে কখন যে কি হয়। রাত জেগে গোয়াল ঘরে গরু পাহারা দিতে হচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় রাতে পুলিশি টহল জোড়দার করার দাবী করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গরু চুরি রোধে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের স্থানীয় ভাবে এলাকায় পাহাড়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও রাত্রিকালীন পুলিশি টহল জোড়দার করা হয়েছে।