নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ক্ষমা প্রার্থনা, মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আসর। এতে আত্মশুদ্ধি, নিজ নিজ গুনাহ মাফ, সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত ও রহমত প্রার্থনা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখো মুসল্লি দু-হাত তুলে আকুতি জানান।
রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টায় টঙ্গীর তুরাগ নদপাড়ের ইজতেমা ময়দানে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। চলে দীর্ঘ ৩০ মিনিট। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লীর হযরত মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ এর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী।
মোনাজাতের শুরুতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে মানুষের হেদায়েত কামনা করা হয়। দুনিয়ার মানুষের সুখ, শান্তি, উন্নতি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ প্রার্থনা করা হয়।
মাওলানা মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভীরের সঙ্গে লাখো মুসল্লি দুই হাত তুলে ‘আমিন’, ‘আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত করছেন তোলেন পুরো টঙ্গী এলাকা। ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো মাইকে সেই ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে তুরাগ নদের চারপাশের এলাকায়। মোনাজাতের সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। টঙ্গীর আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে লাখো কণ্ঠের কান্নার ধ্বনি। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ, এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিয়ে আল্লাহর দরবারে মনের আকুতি জানিয়ে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন।
এর আগে রোববার ফজরের পরই গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বয়ান শুরু করেন ভারতের মাওলানা মুরসালিন। তার বয়ান তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী। সকাল ৯টায় মাওলানা মোশারফ হোসেন তালিম করেছেন। সাড়ে ৯টায় ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলাভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী হেদায়েতি বয়ান শুরু করেন।
এদিকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সারাদেশ থেকে মানুষের ঢল নেমেছে টঙ্গী এলাকায়। আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে থেকে বাসে, রিকশায়, ভ্যানে চড়ে কিংবা পায়ে হেঁটে মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমার উদ্দেশ্যে যেতে দেখা যায় মুসল্লিদের।
এর আগে দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে গতকাল শনিবার টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির উদ্দেশে চলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় লাখো মুসল্লি যোগ দিয়েছেন এবারের বিশ্ব ইজতেমায়। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শিল্পনগরী টঙ্গী ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে ছুটে আসছেন টঙ্গীর তুরাগতীরে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিরদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। শনিবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। শনিবার সকালেই টঙ্গী শহর এবং ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
৬২ দেশের প্রায় ৮ হাজার ও দেশের লাখ লাখ মুসল্লির আগমনে মুখর ইজতেমার মাঠ টঙ্গীর আশপাশ। রোববারের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা শনিবার রাত থেকে ইজতেমা ময়দানে আসা শুরু করেছেন। শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে এক ছাতার নিচে জড়ো হয়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম বলেন, বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাত ও হেদায়েতি বয়ান করবেন ইজতেমায় আদি তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী। এবার ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৬ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এর আগে, ইজতেমার প্রথম পর্বে সাতজন মুসল্লির মৃত্যু হয়।