বিডিকর্পোরেট নিউজঃ আইন মেনেই প্রতিযোগিতায় থাকবে বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এমন অভিব্যক্তি জানালেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক -মো. জাকির হোসেন।
সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবসায়িক মটো তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা চাই গ্রাহক সেবার মাধ্যমে ব্যবসায় টিকে থাকতে। এ জন্য স্বচ্ছতার দিকটির প্রতি আমরা বেশি গুরুত্ব দেব। এক্ষেত্রে আমরা উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তির সমন্বয় করতে চাই।
তিনি বলেন, দেশের বীমা বাজারে নতুন ১৪টি কোম্পানি এসেছে। নতুন -পুরাতন মিলিয়ে ৩৩টি কোম্পানি জীবন বীমা ব্যবসা পরিচালনা করছে। যতগুলো কোম্পানি রয়েছে, সে তুলনায় দেশে দক্ষ মানব সম্পদের অভাব এখনো রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমী থেকে প্রতি বছরই প্রশিক্ষিত জনশক্তি বেড়িয়ে আসছে। এছাড়াও প্রতিটি কোম্পানিতেই নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। ফলে প্রতিবছরই বেশ কিছু প্রশিক্ষিত কর্মী পাচ্ছে বীমা খাত।
জাকির হোসেন আরো বলেন, এদেশের মানুষের বীমার প্রতি আগ্রহ খুবই কম। এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম আস্থার সংকট। তিনি বলেন, জীবন বীমাকেই যারা একমাত্র পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের মধ্যেই একটি শ্রেনী রয়েছে অপেশাদার। তারা হরহামেশাই অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এরাই প্রিমিয়ামের টাকা আত্মসাতের মতো ঘটনা ঘটায়। যা প্রভাব ফেলে কোম্পানিগুলোর ওপর। কোম্পানির প্রতি বীমা গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এমন অবস্থায় আর্থিক ক্ষতির ভয়ে অনেকেই বীমা কর্মীকে এড়িয়ে চলে। তবে এমন অবস্থা থেকে বীমা কর্মীদের বেড়িয়ে আসার আহবানও জানান তিনি।
ক্ষুদ্র বীমা নিয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে এ নির্বাহী বলেন, দেশের জীবন বীমা বাজারে ক্ষুদ্রবীমার যেমন প্রসার হয়েছে তেমনি এ বীমার কারণে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ছোট ছোট প্রিমিয়ামের টাকা সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এ বিষয় বিবেচনা করেই সানফ্লাওয়ার লাইফ প্রথম থেকেই ক্ষুদ্র বীমার চেয়ে একক বীমার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
এমন অবস্থার থেকে উত্তরণের জন্য গ্রাহকদের এগিয়ে আসতে হবে মত প্রকাশ করে এ নির্বাহী বলেন, বীমার টাকা আইন মেনেই গ্রাহককে ফেরত দিতে হয়। গ্রাহক আইনটি বুঝতে চান না। অথচ আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। আর এ আইনটি সরকারই করে দিয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী একই। জীবন বীমা একজন ব্যক্তির আর্থিক ঝুঁকি গ্রহণ করে। তার আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে। এটিই বীমার মুল কথা। ব্যাংক ও বীমায় সঞ্চয়ের মধ্যে একটি বেসিক পার্থক্য রয়েছে। বীমা সঞ্চয়ের টাকা নেয় এর পাশাপাশি ঝুঁকিও গ্রহণ করে। অন্যদিকে ব্যাংক শুধু সঞ্চয়ের টাকা নেয়। তারা কোনো ঝুঁকি গ্রহণ করে না। দেশের কোম্পানিগুলো কম বেশি সে কাজ করে আসছে। গ্রাহককে তার স্বার্থটি আইনগত ভাবেই চিন্তা করা উচিত।
বীমা খাতের সমস্যা সম্পর্কে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এসব সমস্যা খুবই পুরনো। দীর্ঘদিন থেকেই এমনটি চলে আসছে। এর পিছনে কারণটা হলো, সরকার বীমা খাত উন্নয়নে কোনো ভূমিকা নেয়নি। অথচ সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠতে পারে বীমা খাত। বীমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম আয়ের উপর সাড়ে ৩ শতাংশ নবায়ন ফি ও সাড়ে ৪২ শাতংশ করপোরেট ট্যাক্স দিয়ে থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, গ্রামের একজন অল্প শিক্ষিত বীমা এজেন্ট মাসে যার আয় হয়তো ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, সে ব্যক্তিও সরকারকে তার কমিশন আয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিয়ে থাকে। তাই বীমা খাতকে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে এ খাতের উন্নয়নে সরকারের কোনো বিনিয়োগ প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে শক্তিশালী করা, তাদেও নজরদারি বাড়ানো।
বীমাখাতের সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে জাকির হোসেন বলেন, দেশের জীবন বীমার বাজার খুবই সম্ভাবনাময়। সেতুলনায় আমাদের আধুনিক পণ্যের অভাব রয়েছে। এর কারণ আমাদের দেশে পর্যাপ্ত একচ্যুয়ারী নেই। এরপর আমরা এবছরে বেশি কিছু নতুন পণ্য বাজারে আনার চেষ্টা করছি। নতুন পণ্যের ক্ষেত্রে বীমা প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ানো প্রতি গুরত্ব দেব। অর্থাৎ আমরা এমন পণ্য বাজারে আনতে চাই যে পণ্যটিই গ্রাহকদের মাঝে আস্থা সৃষ্টি করবে।