ডা: মো: ফারুক হোসেন।। আপনাদের টুথব্রাশে একশ মিলিয়নের বেশি ব্যাকটেরিয়ার বসবাস যার মধ্যে রয়েছে ই-কোলাই এবং স্টাফাইলোকক্কাই ব্যাকটেরিয়া। এক গবেষণায় টুথব্রাশের মধ্যে মলের সঙ্গে সম্পৃক্ত জীবাণুর উপস্থিতি পর্যন্ত পাওয়া গেছে। কিন্তু এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ মানুষের মুখ ব্যাকটেরিয়া দিয়ে পরিপূর্ণ। আর এ কারণেই টুথব্রাশ সম্ভবত আমাদের অসুস্থ করে তুলবে না। কিন্তু টুথব্রাশ পরিষ্কার রাখার উপায় আছে যাতে আমরা সুস্থ থাকি।
মুখের ব্যাকটেরিয়া : মুখে শত শত জীবাণু বসবাস করে। এমনকি প্ল্যাক যে উপাদান আমরা দাঁত ব্রাশের মাধ্যমে অপসারণের চেষ্টা করি তা মূলত ব্যাকটেরিয়া দিয়ে গঠিত। এগুলোর কোনটিই উদ্বেগের কারণ হয় না যদি মুখে অস্বাস্থ্যকর ভারসাম্য দেখা না দেয়। মুখে ভালো এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার একটি ভারসাম্য বজায় থাকে। যদি অস্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এ ভারসাম্য নষ্ট হয় তাহলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
টুথব্রাশিং এবং দাঁতের ক্ষতি : ইলেকট্রিক টুথব্রাশ দিয়ে যখন দাঁত ব্রাশ করা হয়, তখন তা জীবাণুকে ধাক্কা দেয় মাড়ির নিচে যাওয়ার জন্য। এ জীবাণুগুলোর অধিকাংশই যেহেতু মুখে বিদ্যমান থাকে, তাই এগুলো থেকে সম্ভবত অসুস্থ হবেন না। কিন্তু যদি আপনার টুথব্রাশ অন্যরা ব্যবহার করে অথবা আপনি অন্যদের টুথব্রাশ ব্যবহার করেন তাহলে জীবাণু বিস্তৃতি লাভ করবে।
টুথব্রাশ কি অসুস্থ করে : নিজের টুথব্রাশ থেকে সংক্রমিত হবেন না অর্থাৎ সংক্রমণ সৃষ্টি হবে না। এমনকি আপনার টুথব্রাশের ওপর যদি ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলেও রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনুপ্রবেশকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ফ্লাসিংয়ের স্থানে টুথব্রাশিং নয় : বাথরুমে যে স্থানে টুথব্রাশ সংরক্ষণ করেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ বাথরুমে টয়লেট সিংক বেসিনের খুব কাছে থাকে। অধিকাংশ মানুষ বেসিনের ওপর টুথব্রাশ হোল্ডারে টুথব্রাশ রাখেন। যতবার কমোড ফ্লাস করেন ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটা টুথব্রাশে সংযুক্ত হয়। টুথব্রাশকে টয়লেট থেকে যতটা সম্ভব দূরে সংরক্ষণ করতে হবে। ব্রাশটিকে সম্ভব হলে মেডিসিন ক্যাবিনেটে সংরক্ষণ করা উচিত। আরেকটি বিষয় হলো ফ্লাসিংয়ের আগে সব সময় টয়লেট লিড বন্ধ রাখতে হবে, যেন ব্যাকটেরিয়া টুথব্রাশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
টুথব্রাশ হোল্ডার : টুথব্রাশ হোল্ডারে ব্যাকটেরিয়া স্থান করে নিতে পারে; যা ছড়িয়ে পড়ে টয়লেট ফ্লাসিংয়ের সময়। ন্যাশনাল স্যানিটেশন ফাউন্ডেশনের (NSF) সমীক্ষায় দেখা গেছে, টুথব্রাশ হোল্ডার তৃতীয় জীবাণুযুক্ত ঘরের আইটেম বা জিনিস। ডিস স্পঞ্জ এবং কিচেন সিংকের পরে টুথব্রাশ হোল্ডারের অবস্থান। যেখানে প্রচুর জীবাণু থাকে। তাই টুথব্রাশ হোল্ডারের জীবাণু অপসারণের জন্য নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
টুথব্রাশ সংরক্ষণের টিপস : আপনার ব্রাশটি ট্যাপের পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার ও শুকিয়ে রাখতে হবে। টুথব্রাশের কভার লাগাবেন না। কারণ আর্দ্র আবহাওয়া ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি করে থাকে। হোল্ডারে ব্রাশ খাড়া করে রাখতে হবে। কারও ব্রাশ ব্যবহার করবেন না বা অন্যকে আপনার ব্রাশ ব্যবহার করতে দেবেন না। ব্রাশগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে। আর একসঙ্গে রাখলে খেয়াল রাখতে হবে একটি ব্রাশ যেন অন্য ব্রাশকে স্পর্শ না করে।
টুথব্রাশ স্যানিটাইজারস কী কাজ করে : কিছু পণ্য রয়েছে যার উৎপাদনকারীরা দাবি করে, এগুলো টুথব্রাশকে স্যানিটাইজ করে। কেউ আলট্রাভায়োলেট রে ব্যবহার করে। অন্যরা স্প্রে অথবা রিনজ ব্যবহার করে। কিছু ব্রাশ রয়েছে যার ব্রিসল মূলত তৈরি হয় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ব্রিসলস দিয়ে। এ পণ্যগুলো কিছু জীবাণু মেরে ফেলে। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই এগুলো ব্যবহার করে আপনার অসুস্থতার ঝুঁকি কমবে। আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (ADA)-এর মতে টুথব্রাশ ব্যবহারের পর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল মাউথ রিনজের মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর ফলে ব্রাশে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমবে।
টুথব্রাশ পরিবর্তনের সময় : প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিৎ। সবচেয়ে বড় কথা ব্রাশের ব্রিসলগুলো যদি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বা ছড়িয়ে পড়ে তাহলে দ্রুত ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে। বাচ্চাদের ব্রাশ বড়দের চেয়ে দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে। ইলেকট্রিক টুথব্রাশের ক্ষেত্রে ব্রাশের হেড পরিবর্তন করে নিতে হবে অন্য ব্রাশের নিয়মের মতোই। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় প্রতি দুইমাস পরপর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত। কারণ আমাদের দেশে মাড়ি রোগীর সংখ্যা বেশি।
মুখের যত্ন : মনে রাখতে হবে ব্যাকটেরিয়া মাড়ি রোগ, দন্তক্ষয় এবং মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। ব্রাশিং এবং ফ্লাসিং যতটুকু সম্ভব করতে হবে এবং দাঁত ব্রাশ করার আগে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ ওয়াশ করে নিলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়া অনেকাংশে অপসারিত হয় এবং টুথব্রাশে লাগার সুযোগ পায় না। তাই দাঁত ও মুখের যত্নের পাশাপাশি টুথব্রাশের যত্ন নিতে হবে এবং যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: ডা: মো: ফারুক হোসেন, মুখ ও দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ, ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।