তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: গ্যাস অনুসন্ধানে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পতনঊষার ইউপির একটি গ্রামের জমিতে বিস্ফোরণ ঘটানোয় কাজ করছেন কর্মীরা।
গ্যাস অনুসন্ধানে কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ভূগর্ভে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে একটি বিদেশি কোম্পানি। বারবার ভূকম্পনে গ্রামের পাকা ও আধা পাকা বসতবাড়ি, দেয়াল ও ভবনের ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্থানে ভবিষ্যতে ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চা–শ্রমিকদের পুরোনো ঘরেও ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
গ্যাস অনুসন্ধানে চিহ্নিত স্থানগুলোতে মাটি ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরে দুই মাস ধরে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউপি ও শমশেরনগর ইউপি’র বিভিন্ন গ্রাম ও চা বাগান এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিএনপিসি)।
সিএনপিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে এই জরিপকাজ চলছে। কাজের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি সাপেক্ষে জরিপ ও ড্রিলিং কাজ চলছে। মৌলভীবাজারের ২০টি সহ সারা দেশের ৪৯টি চা বাগানে কাজ করার অনুমতি রয়েছে তাদের। তবে এসব কাজের জন্য ফসলের কিংবা বাড়িঘরে কোনো ধরনের ক্ষতি হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
শ্রীসূর্য্য গ্রামের বাসিন্দা ফটিকুল ইসলাম বলেন, বাড়িঘরের আশপাশে যে হারে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, এতে তাঁরা আতঙ্কে আছেন। শিশু ও অসুস্থ লোকজন ভীত হয়ে পড়েছেন।
দেওছড়া চা বাগানের শ্রমিক রাজু গৌড় বলেন, বিস্ফোরণের কারণে তাঁর ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। চা বাগানের আরও অনেক শ্রমিকের ঘরের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল।
প্রশাসন, স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে জরিপ, ড্রিলিং ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জে ও বসতবাড়ির আঙিনায় ড্রিলিং করে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এতে অসুস্থ রোগী ও শিশুরা আতঙ্কিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান বলেন, পেট্রোবাংলার অনুমোদন নিয়ে গ্যাস সার্ভে শুরু হয়েছে। বিস্ফোরণ ঘটানোয় যদি কারও ক্ষতি হয়, তাহলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
নোয়াগাঁও গ্রামের কবির মিয়া, ধূপাটিলা গ্রামের বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী নূরুল মোহাইমীন বলেন, কয়েক দিনের বিস্ফোরণে ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে ভূমিকম্প হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বসতবাড়ির পাশে যে হারে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে, তাতে শুধু ঘরবাড়িরই ক্ষতি হবে না, এটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হবে। দিনে শতাধিকবার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে মাটির স্তর পরিবর্তন, পানিদূষণ, টিউবওয়েলে সমস্যা, বন্যা ও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি ও মাটি ধসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে।