কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : গোপালগঞ্জ জেলায় এবার ১৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্বতিতে বারো ধান আবাদ হয়েছে। যান্ত্রিকীকরণ ও অধুনিক চাষাবাদের নাম হল সমলয়। এ পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষক দলবদ্ধ হয়ে এক সাথে জমিতে এক জাতের ফসল আবাদ করেন। ক্ষেতের ফসল এক সাথে পাকে। পোকার আক্রমণ তেমন হয়না। ফসল উৎপাদনে খরচ সাশ্রয় হয়। ফসলের অধিক উৎপাদন পেয়ে কৃষক লাভবান হন।
গত বছর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলায় সমলয় পদ্ধতিতে ৩ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব প্রদর্শনী থেকে কৃষক ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হন। চলতি বোরো মৌসুমেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোপালগঞ্জ জেলায় সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ৩টি প্রদর্শনী প্লট করছে।
এ তথ্য জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের আটাশীবাড়ী গ্রামের ৯১ জন কৃষককে সংগঠিত করে ৫০ একর জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৩ দিয়ে সমলয়ের প্রদর্শনীর কাজ শুরু হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের পূবের বিলের সীমানার খাল এলাকার ২৭ জন কৃষকের ৫০ একর জমি নিয়ে সমলয় পদ্ধতির চাষাবাদ চলছে। মুকসুদপুর উপজেলার মোচনা ইউনিয়নের মোচনা গ্রামের ৩৫ জন কৃষককে সংগঠিত করে ৫০ একর জমিতে সমলয় চাষাবাদ চলছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন,এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান মাড়াই পর্যন্ত যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এ চাষাবাদে কম খরচে কৃষক অধিক ধান উৎপাদন করতে পারেন। ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হন। এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে । তাই সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছি।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন,সমলয়ে চাষাবাদে আমরা রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের আটাশীবাড়ী গ্রামের ৯১ জন কৃষককে সম্পৃক্ত করেছি। তাদের জমিতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদের শুরুতে আমরা ট্রেতে বীজতলা করেছি। প্রতি বিঘায় প্রচলিত চাষাবাদে হাইব্রিড ধানবীজ ৪ কেজি ও উফশী ধানবীজ ৮ কেজি দিয়ে বীজতলা তৈরী করতে হয়। সেখানে সমলয়ে চাষাবাদে বিঘা প্রতি বীজ খরচ অর্ধেক হয়েছে। বীজে কৃষকের খরচ বেঁচেছে। এ চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করতে গেলে অন্তত ৬ হাজার টাকা খরচ হত। এছাড়া উইডার মেশিন দিয়ে নিড়ানী দেওয়া হবে। এতে মাত্র ২ জন শ্রমিক প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে অন্তত ১০ জন শ্রমিকের মজুরী সাশ্রয় হবে। এ ধান পাকার পর কম্বাইন্ড হারবেস্টার দিয়ে কেটে মাড়াই করে দেয়া হবে। এ মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান কাটতে মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হবে। এতে সাশ্রয় হবে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এ পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষকের বিঘাপ্রতি অন্তত ১২ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া এ পদ্ধতির চাষাবাদে বিঘাপ্রতি হাইাব্রিডে ৩০ মণের স্থলে ৩৫ মণ ধান উৎপাদিত হবে। উফশী জাতে ২৫ মণের স্থলে ৩০ মণ ধান উৎপাদিত হবে। এ পদ্ধতির চাষাবাদে জমিতে কোন আইল থাকে না। তাই ধানের উৎপাদন বেড়ে যায়। খবর বাসস।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ হাজার ৪৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে আইল রয়েছে প্রায় পৌনে ২ হাজার হেক্টর। জমির আইল আনাবদি থাকে। সব জমিতে সমালয়ে চাষাবাদ হলে ওই পৌনে ২ হাজার হেক্টর চাষাবাদের আওতায় আসত। এতে আরো ১১ হাজার মেট্রিকটন ধান বেশি উৎপাদন হত।
এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে ওই কৃষি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
আটাশীবাড়ী গ্রামের কৃষক মহিউদ্দি বলেন,এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে বীজতলা তৈরীতে অর্ধেক বীজ লেগেছে। এতে বীজ খরচ সাশ্রয় হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান আবাদ করেছি। এতে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। এ চাষাবাদে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। গত বছর এ পদ্ধতিতে ধানের চাষাবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছিলাম। ভালো ফলন পেলে অধিক লাভবান হয়েছিলাম।
একই গ্রামের কৃষক লায়েক খন্দকার বলেন, ‘এ পদ্ধতির চাষাবাদে সবই যন্ত্রের ব্যবহার। এখানে শ্রমিক তেমন লাগে না। ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তখন শ্রমিককে ১ হাজার টাকা মজুরী দিতে হয়। ধান নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। এ চাষাবাদে গত বছর অধিক ফলন পেয়ে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। এতে আমার অধিক লাভ হয়েছে। তাই এ বছরও চাষাবাদ করছি।’
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার বলেন, আমাদের কৃষি জমি বাড়ছে না। কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান দিতে হয়। তাই অল্প জমিতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। সমলয় এমনই একটি পদ্ধতি। গত বছর এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে গোপালগঞ্জের কৃষক লাভবান হন । তাই অন্য কৃষকরাও এ চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এ পদ্ধতিতে চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জে ১৫০ একর জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এতে ৩ উপজেলার ১৫৩ জন কৃষক সম্পৃক্ত হয়েছেন। এ পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। কৃষক ধান উৎপাদন করে লাভবান হবেন।