ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: বিভিন্ন দেশের ৩০ জন দুর্নীতিবাজসহ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিতে করতে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ও মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে।মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন শিল্পে পণ্য ও সেবা সরবরাহের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধে দেশটির শক্তিমত্তা বাড়ানো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের মধ্যে দেড় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া শতাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা এমন সময় ঘোষণা করা হলো, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন কংগ্রেস সফর করেছেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইউক্রেনে আরও সামরিক সহায়তা পাঠানোর লক্ষ্যে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে হোয়াইট হাউস।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) বলছে, তুরস্ক ও আরব আমিরাতের একাধিক প্রতিষ্ঠানও নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান ‘থামেস্টোন’ ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক ‘মাইক্রো ইলেকট্রনিকস টেকনোলজিসের’ ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া একটি নেটওয়ার্ক চীন, রাশিয়া, হংকং ও পাকিস্তানভিত্তিক। এই নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা চীনের তৈরি অস্ত্র ও প্রযুক্তি রাশিয়ায় সরবরাহ করেছে। নেটওয়ার্কটির আওতায় রয়েছেন চীনের নাগরিক হু জিয়াওজান ও চীনভিত্তিক বেসরকারি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘জার্ভিস এইটকে কোম্পানি’।
স্যাটেলাইট থেকে ছবি ধারণকারী চীনা প্রতিষ্ঠান ‘বেইজিং ইউনজে টেকনোলজি কোম্পানি’ ও ‘চ্যাং গুয়াং স্যাটেলাইট টেকনোলজি কোম্পানির’ ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, দুটি প্রতিষ্ঠানই ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী রুশ প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপকে উচ্চমানের স্যাটেলাইট ছবি সরবরাহ করেছে।
এ নিয়ে আলাদা এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার নানা অপরাধ এবং ইউক্রেন যুদ্ধে যারা মস্কোকে সমর্থন ও অর্থ দিচ্ছে, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের হাতে থাকা অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে থাকব।’
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান আইনের আওতায় আমি ৩০ জনের বেশি ব্যক্তির ওপর ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করছি। এদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। এর ফলে এসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।’
জানা গেছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আফগানিস্তানের সাবেক স্পিকারসহ দুই সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাসহ দেশটির ৪৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক সরকারি কৌঁসুলি এবং গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ডোমিনিকান রিপাবলিকের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল, হাইতির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দুজন সাবেক সিনেটর, লাইবেরিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেও ভিসা বিধিনিষেধ দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
এছাড়া, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ার অভিযোগে সোমবার মধ্য আমেরিকার জনবহুল দেশ গুয়েতেমালার ১০০ সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৩০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।