নিজস্ব প্রতিবেদক : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর হামলা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, মাঝেমধ্যে দুই একটা খুন-খারাপি হয়। হাদির একটা ঘটনা হয়েছে, আমরা এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি। এটি বাংলাদেশে নতুন নয়। নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে তরুণ ভোটারদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিইসি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে নির্বাচন নিয়ে কিছু আশঙ্কা হয়ত আছে, তবে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই—নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। ইনশাআল্লাহ, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবার সহযোগিতা নিয়ে।
সিইসি বলেন, আপনাদের মাথায় যত ধরনের দুশ্চিন্তাই আসুক, আমি অনুরোধ করব—সেই দুশ্চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আমরা সবাই মিলে প্রস্তুতি নেব, যাতে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতি হলো কোথায়? মাঝেমধ্যে দুই একটা খুন-খারাপি হয়। এই যে হাদির একটা ঘটনা হয়েছে, আমরা এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের কোনো অবনতি হয়নি।
সিইসি স্মরণ করিয়ে দেন অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা তো সবসময় ছিল। আগে আহসানউল্লাহ মাস্টারের সঙ্গেও এ রকম হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা হয় বাংলাদেশে, এটা নতুন কিছু না।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা সংক্রান্ত যে প্রশ্ন উঠেছে, তার জবাবে আমি বলতে চাই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের কোনো অবনতি হয়নি। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে, যেমন সম্প্রতি একটি ঘটনা ঘটেছে (হাদির ঘটনা)। কিন্তু এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা আগেও ছিল। বাংলাদেশে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। বরং, আপনারা যদি গত ৫ আগস্ট বা ২৪-এর পরিস্থিতির সাথে তুলনা করেন, তখন থানাগুলো অকার্যকর ছিল, পুলিশ স্টেশনও নড়ছিল না—সেই সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা এখন শান্তিতে চলাফেরা করতে পারছি, রাস্তায় চলাচল করতে পারছি, শান্তিতে ঘুমাতে পারছি।
নাসির উদ্দিন আরও বলেন, আমরা গতকালই আমাদের শীর্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বৈঠক করেছি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, আমাদের বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তারা নিশ্চিত করেছে যে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনে তারা সক্ষম। আপনারা মিডিয়াতে হয়তো দেখেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রস্তুতির কথা আমাদের জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, নির্বাচন সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। জাতিকে আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন ইনশাআল্লাহ তা পরিপালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেব।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা পেছনে ফিরে যাইনি। এখন তরুণদের ওপর ভর করে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আশা করি, আমাদের পরবর্তী নির্বাচন হবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দেশের বিশেষ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ যখন আমি দেখি, তখন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমি আরও বেশি উৎসাহিত বোধ করি।
সিইসি বলেন, আমি বারবার বলে থাকি, এই নির্বাচনটি একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আমরা ডাকযোগে (পোস্টাল ব্যালট) আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের আওতায় এনেছি। গত ৫৪ বছর ধরে যা হয়নি, এবার আমরা সেটা করছি। এবার আমরা প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ যারা ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকেন, তারা কোনোদিন ভোট দিতে পারতেন না। আমরা এবার তাদেরও ভোটের ব্যবস্থা করছি—পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে। কারাবন্দিদের জন্য ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, প্রবাসীদের জন্য করা হচ্ছে এবং যেসব সরকারি কর্মচারী নিজ নির্বাচনি এলাকার বাইরে আছেন, তাদের জন্যও ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সিইসি আরও বলেন, সর্বোপরি এবার একটি গণভোটও একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই সমস্ত দিক থেকে এটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। আমরা যে সাহস করে এই পথে নেমে পড়েছি, আমাদের এই সাহসী পদক্ষেপের সঙ্গে যদি আপনাদের সবার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের, অংশগ্রহণ থাকে—ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন একা সফল হতে পারে না। সবাইকে নিয়েই আমরা এটি করব বলে জানান সিইসি।
আরও পড়ুন:
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত: নৌপরিবহন উপদেষ্টা


